তোয়াহা ফারুক:
ক্রিকেট যদি হয় অনিশ্চয়তার খেলা, তার সবটুকু দোলাচলই যেন ধরা পড়লো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে। বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটের এক দুর্দান্ত জয় তুলে নিলো বাংলাদেশের যুবারা। প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপ জিতলো বাংলাদেশ। এ এক নতুন ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের পাটাতনে দাঁড়িয়ে বীর যোদ্ধার মতো বিজয়ের হাক ছেড়েছেন অধিনায়ক আকবর আলী।
দেশের ক্রিকেটের খবর যারা রাখেন, শুরু থেকেই বলে আসছিলেন এই দলটা অন্যরকম। এই দলের অধিনায়কও অন্য ধাতুতে গড়া। এরা ভেঙে পড়ে না, অদম্য আত্মবিশ্বাসে ঘুড়ে দাঁড়ায়। যুব বিশ্বকাপের পদে পদে সেটিই ধ্রুব সত্য জ্ঞান করে দেখালো শরীফুল-মাহমুদুল-সাকিব-তামিম-আকবররা।
ইমন-তামিমের ব্যাটে দারুণ শুরু করা জুনিয়র টাইগাররা হঠাৎ বিষ্ণুর ঘূর্ণিতে পথ হারা। অল্প সময়ে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয় ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় সাজঘরে ফিরে যান। পায়ের ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন অপর ওপেনার হৃদয়। ম্যাচের মাঝে হঠাৎই এমন চাপ নিয়ে মাঠে নামেন অধিনায়ক আকবর আলী। এরপর যখন যেমন খেলা দরকার তখন তেমনই খেললেন। কখনো বল বাই বল রান তুললেন, তো কখনও বাউন্ডারি। বিগ হিটের সুযোগও হাতছাড়া করেননি।
কিন্তু শাহাদাত, শামীম কিংবা অভিষেকদের কেউই উইকেটে থিতু হতে না পারায় চাপটা পুরোপুরি আকবরের ঘাড়ে এসে পড়ে। ৮৫ রানে ৫ ও ১০২ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এসময় ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়া পারভেজ হোসেইন ইমন আকবরের পাশে দাঁড়ান। ৯ ওভারে ৪১ রানের দারুণ কার্যকর জুটি গড়েন তারা। এরপর হঠাৎই যশস্বী জসওয়ালের বাইরের বল মারতে গিয়ে আকাশ সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন ইমন। ম্যাচ তখন আবারও ভারতের দিকে। কারণ টেল এন্ডার নিয়ে আরও ৩৫ রান টেনে নিয়ে যেতে হবে। ভারতের যুবারাও ততক্ষণে প্রাণ ফিরে পেয়েছে!
এরকম পরিস্থিতিতে সময় নিলেন আকবর। একের পর এক বল ছাড়লেন, ঠেকালেন। পরের ২৪ বলে বাংলাদেশে সংগ্রহ মাত্র ২ রান। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার আকবর টেম্পার হারালেন না। অন্যপ্রান্তে থাকা রাকিবুলকেও মেজাজ হারাতে দিলেন না। অপেক্ষার ফলও মিললো। ৩৬ থেকে ৪০- পরের ৫ ওভারে এলো ১৯ রান। এরমধ্যে চাপে থাকা ভারতের যুবারা অতিরিক্ত রান দিলো ৭! ম্যাচ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের নাগালে চলে এলো।
এরপর বৃষ্টি এসে যেন স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিলো বাংলাদেশের শিবিরে। তারপর ইতিহাস। বৃষ্টি থামলো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতলো বাংলাদেশ। ৭৭ বলে ৪৩ রান করে ম্যাচসেরা- অপরাজিত আকবর আলী। যে ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারির পাশাপাশি আছে অসীম ধৈর্য। নতুন ইতিহাস রচনার দৃঢ় প্রত্যয়।
বোর্ড পরীক্ষায় ‘এ প্লাস’ পাওয়া আকবর অধিনায়ক হিসেবে পেলেন ‘গোল্ডেন এ প্লাস’। ম্যাচসেরার পুরস্কার তো পেলেনই, জয় করলেন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়। ম্যাচ শেষে ট্রফি নেয়ার সময় বাংলায় কথা বলে উঠলেন, দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। বললেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনারা আমাদের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করেছেন। জয় করার কিছু আর বাকি রাখলেন না আকবর!
Leave a reply