চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে একে একে বিশ্বের সব দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে ছয় মাস ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী এ মহামারি। এতে তার একটুও ঝাঁঝ কমেনি। সপ্তম মাসের শুরুতে করোনা সংক্রমণের গতি আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। টানা এক সপ্তাহ বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। অথচ, গত এপ্রিল মাসজুড়ে একদিনও শনাক্তের সংখ্যা লাখের ঘরে পৌঁছায়নি। করোনা প্রাদুর্ভাবের অর্ধবছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। আর কতদিন থাকবে? কী হবে শেষ পর্যন্ত? আদৌ কি টিকা তৈরি হবে? ভবিষ্যৎ বর্তমানের চেয়েও ভয়ংকর? গত ছয় মাসেও এর কোনো উত্তর মেলেনি। তবুও আশায় বুক বাঁধছেন ডাক্তার-বিশেষজ্ঞরা।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনার উৎপত্তি ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর। যদিও তথ্য গোপনসহ গড়িমসিতে করোনা প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সময় লাগে এক মাস। ৩১ ডিসেম্বর করোনা প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত ঘোষণা আসে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কিছু স্বাভাবিক হয়নি। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে অনুযায়ী, ২১ মে থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ দিন বিশ্বে দৈনিক করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক লাখের নিচে ছিল। আর গত ৩ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৩০ হাজার ৪০০ জন। বিভিন্ন দেশের করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ায় সঙ্গত কারণেই আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে পৃথিবীর বহু দেশে এখনো করোনার প্রকৃত চিত্র পেতে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্তসংখ্যক পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, করোনা শনাক্তের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির এ হার একেক দেশে একেক রকম। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সের মতো ব্যাপকভাবে আক্রান্ত দেশগুলোতে নতুন করে শনাক্তের সংখ্যা কমছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মতো অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়ছে। লিবিয়া, ইরাক, উগান্ডা, মোজাম্বিক ও হাইতিতে প্রতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ছে। ব্রাজিল, ভারত, চিলি, কলাম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি দুই সপ্তাহে শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রিয়াসেস বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা বিশেষত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেখানে বহু দেশে মহামারি তীব্র আকার ধারণ করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক সপ্তাহে দৈনিক ৩০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২১ হাজার। আর যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত দিনে গড়ে ৯৪২ জন মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাজিলে রেকর্ড প্রায় ৩০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারসের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ তিন হাজারের বেশি মারা গেছে। সুস্থ হয়ে উঠেছে প্রায় ৩৪ লাখ ৩০ হাজার জন। এ ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ছয় মাসের মধ্যেও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।
Leave a reply