ইয়র্কশায়ারের পাকিস্তানি ক্রিকেটার আজিম রাফিকের বর্ণবাদী অভিযোগ তোলপাড় তুলেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডে। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) তার অভিযোগের আওতায় করা এক সংসদীয় সভায় রাফিক তার প্রতি অমানবিক বর্ণবাদী আচরণের বর্ণনা দেন। সাথে সকলকে মনে করিয়ে দেন, কাউকে ‘পাকি’ বলা বা বর্ণবাদী মন্তব্য করা কখনও কোনো আড্ডার বিষয়বস্তু হতে পারে না। এছাড়াও, ক্রমাগত অমানবিক বর্ণবাদের শিকার হতে হতে বহুবার আত্মহত্যার চিন্তাও করেছেন তিনি।
ইংলিশ ক্রিকেটার গ্যারি ব্যালান্স, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়ক জো রুট এবং সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী অভিযোগ করেছিলেন ইয়র্কশায়ার ক্লাবের ক্রিকেটার আজিম রাফিক। বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেটে। মঙ্গলবার ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সাথে সংসদীয় আলাপে রাফিক বর্ণনা করেন যে তাকে কতটা অমানবিক বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছে।
ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি অস্বীকার করেন এবং বলেন, তার বর্ণবাদী আচরণের কোনো কথা মনে নেই। এই বিষয়ে মোটেও অবাক হননি আজিম রাজিক। তিনি বলেন, তার এমন কিছু মনে থাকবে না এটা আমাকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ সব জায়গায় বর্ণবাদ বিষয়টি এত সাধারণ হয়ে গেছে যে, কেউ সেটাকে সমস্যাই মনে করে না।
ড্রেসিংরুমে তার মতো এশীয় ক্রিকেটারদের কেমন মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে সে বিষয়েও কথা বলেছেন রাফিক। তিনি বলেন, তারা বিভিন্নভাবে আমাদের অসম্মান করতো। সারাক্ষণ পাকি বলা বা আমাদের আলাদা করে অন্য কোথাও বসতে বলা, এসব কিছু খুবই সাধারণ ছিল। এমনকি কোচিং স্টাফদের সামনে এসব হলেও তারা চুপ থাকতো। একবার গ্যারি আমার সামনে এসে আমার এক বন্ধুকে বলেছে, তুমি জানো না সে পাকি? তার সাথে কথা বলছো কেন? সে শেখও না, তার কাছে কোনো তেল নেই। আসলে এমন অনেক ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। বর্ণবাদ এখানে ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি যদি এইসব নিয়ে কথা বলেন তাহলে আপনার জীবন নরক হয়ে যাবে।
একবার কোচদের সামনেও আজিমকে জোর করে রেড ওয়াইন খাওয়ানো হয়েছিল এবং এসবের জন্য তার রোজা রাখাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু কোচিং স্টাফরা চুপ ছিলেন। এমনকি সেই সময় রাফিক তার ছেলের মৃত্যুতে বেশ শোকাহত থাকলেও কারো কাছে কোনো প্রকার সহানুভূতি তিনি পাননি। তার উপর, কর্মকর্তারা এসব বিষয়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিতেন আজিমকে।
এ ঘটনার পর ইয়র্কশায়ারকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজকের তালিকা থেকে বাতিল করা হয়েছে। সাথে ইয়র্কশায়ার ক্রিকেট ক্লাব তাদের অনেক স্পন্সর হারিয়েছে। ইয়র্কশায়ারের নতুন চেয়ারম্যান কামলেশ প্যাটেল রাফিককে এমন সাহসী কাজের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।
Leave a reply