১৯ বছর পর বাবা-মার খোঁজ পেলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী জিয়াউল

|

ছবি: জিয়াউল হক

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:

প্রবাসী জিয়াউল হক ১৯ বছর পর অবশেষে বাবা-মায়ের খোঁজ পেলেন। ২০০৪ সালে ১৫ বছর বয়সে ‘ভ্রমণ ভিসা’য় সিঙ্গাপুর যান। পরে সেখান থেকে মালয়েশিয়ায়। হোস্টেল থেকে পাসপোর্ট ও দেশের ঠিকানা চুরি হয়ে যাওয়ায় কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারেননি। এভাবেই মালয়েশিয়ায় কেটে যায় এতগুলো বছর।

সম্প্রতি যমুনা টিভির এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জিয়াউল হকের (৩৪)। আলাপকালে জানান, ২০০৪ সাল থেকেই মালয়েশিয়ার জহুর বারুতে কাজ করছেন। লেখাপড়া খুব একটা জানেন না। শুধু নাম লিখতে পারেন এতটুকুই। মালয়েশিয়ায় আসার পর প্রথম প্রথম বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল চিঠির মাধ্যমে। তাও আবার আরেকজন লিখে দিতেন। এজন্য তাকে অর্থ দিতে হতো। কিছু দিন যাওয়ার পর জিয়াউল যে কোম্পানিতে কাজ করতেন ওই কোম্পানির হোস্টেল থেকে যাবতীয় মালামাল চুরি হয়ে যায়।

২০০৮ সালে গাজীপুরের একজন ভদ্রলোক বাংলাদেশে যাবেন খবর শুনে ওই ব্যক্তিকে তিনি ৫০ হাজার টাকা দেন দেশে গিয়ে তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করার জন্য। কয়েকদিন পর জিয়াউলকে ফোন করে বললেন, আপনার বাবা-মা লাকসাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন। জিয়াউল কয়েকদিন কান্নাকাটি করে পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে কাজে মনোযোগ দিলেন। এরই মাঝে ২০১৪ সালে জহুর বারুতে ইজা নামে মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন। তার রয়েছে ফাতিহা ইজারা নামের সাত বছর ও ফায়হা ইনারা দুই বছরের দুটি কন্যাশিশু।

বিয়ের পরপর জিয়াউল চাকরি ছেড়ে জহুর বারুতে শুরু করেন কার ওয়াসের ব্যবসা। ভালোই চলছে তার দিন। কিন্তু নাড়ির টানে কাজে মন বসে না। সিদ্ধান্ত নিলেন যে করেই হোক দেশে যাবেন, প্রিয়জনকে খুঁজে বের করবেন। তার মন বলছে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই বেঁচে আছেন। কিন্তু যাবেন কীভাবে? তার কাছে নেই পাসপোর্ট। নেই দেশের আইডেন্টিটি- বলছিলেন জিয়াউল হক।

জিয়াউল নতুন পাসপোর্ট করার জন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে তার বিস্তারিত ঘটনা বললে কর্তব্যরত পাসপোর্ট শাখার একজন কর্মকর্তা তাকে রোহিঙ্গা বলে তাড়িয়ে দেন। এরপর চলে গেলেন জহুর বারু। দেখা করে কমিউনিটি নেতা মোস্তাফা হোসাইনকে বিস্তারিত বললেন। কমিউনিটি নেতা মোস্তাফা হোসাইন তাকে আশ্বস্ত করলেন, জিয়াউলের পরিবারকে খুঁজে বের করবেন। মোস্তাফা হোসাইন জিয়াউল হকের কাছ থেকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা লাকসামের ঠিকানা অনুযায়ী একজন লোক পাঠালেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউলের বাড়ির সন্ধান মিললো। কথা হলো তার চাচির সঙ্গে। তাও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বিস্তারিত খুলে বলার পর জিয়াউলের চাচি তাকে চিনলেন। জিয়াউল যখন মালয়েশিয়া আসেন তখন তার বাবা নূরুল আমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে কাজ করতেন। স্টেশনের স্টাফ কোয়ার্টারেই থাকতেন। এখন পেনশনে রয়েছেন তার বাবা। গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে গাজীপুরে বাড়ি করেছেন। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে জিয়াউল ছিলেন সবার বড়। তিন ভাই ও তিন বোন বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। ছোট্ট একটি বোন সুলতানা এখনও লেখাপড়া করছে। এখন প্রতিদিন বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা হয় জিয়াউলের। জিয়াউলের দেশের পরিচয় মিললো। তার বাবা-মা পরিবারকে ফিরে পেলেন। এরই মধ্যে জিয়াউলের বাবা তার জন্মসনদ, নাগরিকত্ব সনদ সত্যায়ন করেছেন। পাঠিয়েছেন দূতাবাসের মেইলে। জিয়াউল এখন তার কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ পাসপোর্টের জন্য কি আবেদন করতে পারবেন?

এদিকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে ছয় মাসের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আসার জন্য। অন্যথায় তাকে তার মালয়েশিয়ার পরিবার ছেড়ে নিজ দেশে চলে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এবার জিয়াউলকে বাংলাদেশি একটি পাসপোর্ট দিয়ে তার জীবন চলার পথ সহজ করে দিবেন বলে আশা করছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জিয়াউলের এমন কঠিন সময়ে পাসপোর্ট প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীরা।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply