টেলিযোগাযোগ সেবা: অভিযোগের অন্ত নেই, মিলছে না সমাধান

|

কলড্রপ, মিউট কল কিংবা ধীরগতির ইন্টারনেট এমন বহু অভিযোগ নিয়েই চলছে দেশের টেলিযোগাযোগ সেবা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও সেবার মান বাড়েনি। অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরদের অভিযোগ, তৃতীয় পক্ষের অবকাঠামো ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার প্রভাব পড়ছে সেবার মানে। টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা উপেক্ষিত হওয়ায় বিস্তৃত হচ্ছে না নেটওয়ার্ক।

দেশের টেলিযোগাযোগ সেবার মান বাড়াতে বিটিআরসির বারবার তাগাদার পরও কোনো উদ্যোগেই সেবার মান উন্নত হচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে এক বছরের কলড্রপের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিটিআরসি। তাতে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের কলড্রপের সংখ্যা ছিল ১০৩ কোটি, রবির ৭৬ কোটি, বাংলালিংকের ৩৬ কোটি এবং টেলিটকের কলড্রপ ছিল ৬ কোটি।

সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আগের মতো নিজস্ব নেটওয়ার্ক সুবিধা কাজে লাগাতে পারছে না অপারেটররা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন গাইড লাইনের আওতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত একাধিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। ইকো সিস্টেমে তৃতীয় পক্ষের সেবার মানদণ্ড না থাকায় গ্রাহক প্রান্তে সেবা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, এমন অভিযোগ মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের।

এ নিয়ে অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, মাঝখানে যদি ২-৩ জন থেকে যায়, তাহলে তাদের মাধ্যমে সেবা নিতে গেলে সেবার মানে প্রভাব পড়বেই। আমাদের জন্য হয়তো সেবার জন্য মানদণ্ড ঠিক করে দেয়া আছে। কিন্তু মাঝখানের লেয়ারদের জন্য সেই মানদণ্ড ঠিক না থাকলে গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া খুবই দুস্কর হয়ে যায়।

সেবার মান খারাপ হওয়ায় এরইমধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটির সিম বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেবার মান উন্নত করা না হলে, অন্য অপারেটরদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কলড্রপের ক্ষেত্রে আমরা একবারের জায়গায় ৩ বার কল দিই। তার তো আবার কস্ট আছে। কিন্তু এটা তো সিম কোম্পানির দোষ, আমার না। কলড্রপের ক্ষেত্রে আমাকে সেই কস্ট যে ফেরত দেবে, তাও দেয় না।

এদিকে, গ্রাহক সেবায় নির্ধারিত অবকাঠামো ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে। শীর্ষ তিন অপারেটরের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের হার ২০ শতাংশের কম। অন্যদিকে উপেক্ষিত হচ্ছে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা। ২০১৮ সালে টাওয়ারকো লাইসেন্স প্রদান করে বিটিআরসি। অথচ এই লাইসেন্স দেয়ার পর টাওয়ার শেয়ারের আবেদন করেও বছরের পর বছর তা ঝুলে আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থায়। ফলে গ্রাহকদের জন্য নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার যাচ্ছে না, এমন অভিমত অপারেটরদের।

সেবার মান বিঘ্নিত হচ্ছে স্বীকার করে রবির চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যফেয়ার্স মো. শাহেদ আলম বলেন, গ্রাহকের অভিযোগ অনুযায়ী আমাকে যদি সাইট বসাতে হয় তাহলে আমি সাইট বসাতে পারছি না, কারণ আমার অনুমতি নেই। এখন এ ক্ষেত্রে আমি টাওয়ার শেয়ারও করতে পারছি না। ফলে এই দীর্ঘসূত্রীতার কারণে সবার ক্ষেত্রে সেবার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কের সেবার মান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতি দশ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে অপারেটররা খুবই কম তরঙ্গ ব্যবহার করছে। যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply