বোনো’র বুনো পারফর্মেন্সে প্রথমবারের মতো শেষ আটে মরক্কো; স্পেনের বিদায়

|

ছবি: সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপ ধরে রেখেছে তার চরিত্র। একের পর এক অঘটনই যেখানে স্বাভাবিক ঘটনা, সেখানে টাইব্রেকারে বোনোর বীরত্বে মরক্কোর কাছে ৩-০ গোলে বিদায় নিয়েছে লুইস এনরিকের স্পেন। আর দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো।

আসরের ২য় শুট আউট। আগেরদিনই জাপান নিজেদের নার্ভ ধরে রাখতে পারেনি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। নকআউট পর্বের শেষ দিনে আবারও ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। এবার অভিজ্ঞ স্পেনের সামনে মরক্কো। লড়াইটা দাঁড়ায় উনাই সিমন বনাম বোনো’র মধ্যে। মনস্তাত্ত্বিক এই লড়াইয়ে চাপটা নিয়ে ফেলেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক।

প্রথম শটেই সিমনকে ফাকি দেন আবদেলহামিদ সাবিরি। কিন্তু পাবলো সারাবিয়ার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে আভাস পাওয়া যায়, আজ তাদের দিন না। ২য় শটে হাকিম জিয়েচ আবারও সিমনকে ফাঁকি দিলে আশায় বুক বাধে আফ্রিকান দেশটি। তবে সোলেরের শট বোনোর হাতে আটকে গেলে অনেকটাই এগিয়ে যায় মরক্কো। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাদের নকআউট পর্বে ওঠাটা যে একেবারেই হাওয়ায় হয়ে যায়নি, তা বুঝতে শুরু করে স্প্যানিশরা।

মরক্কোর ৩য় শটে এসে উনাই সিমন বেনাউনের শট ফিরিয়ে দিলে কিছুটা আশা টিকে থাকে স্পেনের। কিন্তু ৩য় শটেও যে বুসকেটস বল জালে জড়াতে পারবেন না, এটা ছিল অবিশ্বাস্য। ইতিহাস গড়ার পথে নিজের কাজটা তখন করেই ফেলেন বোনো। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ১২০ মিনিট তো বটেই, টাইব্রেকারেও নিজের জাল অক্ষত রাখেন তিনি। আর দলের ইতিহাস গড়ার শেষ কাজটি করেন দেশটির পোস্টার বয় আশরাফ হাকিমি। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা দেশটি প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে।

এর আগে, অবশ্য ঘটনা হতে পারতো সম্পূর্ণ ভিন্ন। শেষ ২৪ ম্যাচের সবক’টিতে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়েছে স্প্যানিশরা। রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে শুরু থেকেই নিজেদের চিরাচারিত টিকিটাকার দিকে মনোযোগ দেয় লুইস এনরিকের দল। বল পজেশনে রেখে আক্রমণে গিয়ে পোস্টের কাছাকাছি একাধিক শট নিয়েও ডেডলক ভাঙতে পারেনি স্পেন। অন্যদিকে, গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেও স্প্যানিশ রক্ষণ দেয়াল ভাঙতে পারেনি মরক্কো।

গ্রুপের প্রথম ম্যাচে যেভাবে গোলবন্যা বসিয়েছিল লা ফুরিয়া রোহারা, তার কিছুই এর পরের ম্যাচগুলোতে দেখাতে পারেনি এনরিকের শিষ্যরা। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মরক্কোর গোল মুখে গিয়ে বারবার খেই হারিয়েছে ফেরান তোরেস-অ্যাসেনসিওরা।

গোটা প্রথমার্ধে ৬৯ শতাংশ বল ধরে রেখে স্পেন একটি মাত্র শট নেবার সুযোগ পেলেও তা অন টার্গেটে ছিল না। বিপরীতে স্পেনের পোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি শট নেয় মরক্কো। যার মধ্যে একটি শট তো ডান দিকে ঝাপিয়ে পরে উনাই সাইমন না ফেরালে এগিয়ে যেতে পারতো আসরে টিকে থাকা একমাত্র আফ্রিকান দেশটি।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোলের জন্য অ্যাসেনসিও, দানি অলমো আর ফেরান তোরেসরা একের পর এক আক্রমণ হানালেও মরক্কোর রক্ষণ ভাঙতে ব্যর্থ হয় ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য আরও মড়িয়া হয়ে ওঠে এনরিকের দল। প্রথমবারের মত পোস্টে বল রাখলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারছিল না স্প্যানিশরা। প্রতিবারই দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় হাকিমিদের রক্ষণ। ৬৩ মিনিটে মোরাতা-সোলারকে নামিয়েও কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

৮৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে স্প্যানিশদের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল আফ্রিকান প্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিজ্ঞতার কাছে কিছুটা মার খেয়ে যায় এবারের আসরের অন্যতম চমক দেখানো দলটি।

ম্যাচের শেষ দিকে ড্যানি অলমোর ফ্রি-কিক থেকে মরক্কোর গোলরক্ষক বোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ালে অতিরিক্ত সময়ে গড়াতো না ম্যাচটি। গোলশূন্যভাবে ম্যাচ শেষ হলে, আসরে ২য় বারের মতো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায় স্পেন-মরক্কো’র রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলাটি।

১০৪ মিনিটে ওয়ালিদ ছেদিরা পেয়েছিলেন ম্যাচের সবচেয়ে দারুন সুযোগ। স্প্যানিশ গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ এই মরক্কোর ফরোয়ার্ড। সাইমনের হাতে বল না আটকালে ইতিহাস গড়া হয়ে যেতো আফ্রিকান দেশটির। দুই দলের গোলরক্ষক নিজেদের ৯০ মিনিটের ধারাবাহিকতা ধরে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ধরে রাখায় গোলশূন্যতে শেষ হয় প্রথম ১৫ মিনিটের খেলা।

২য় ১৫ মিনিটেও চাপ ধরে রাখে স্পেন। কিন্তু গোল যেনো আজ সোনার হরিণ! পাল্টা আক্রমণে মরক্কোও সুযোগ পেয়েছিল; তবে ছেদিরা খেই হারান বক্সের ভেতর ঢুকে। শেষ পর্যন্ত ১২০ মিনিটেও গোল বের করে পারেনি দুই দলের কেউই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে বোনোর বীরত্বে ইতিহাস গড়ে শেষ আটে এখন আফ্রিকান দেশ মরক্কো।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply