কাতার বিশ্বকাপ একই দিনে দেখলো দ্বিতীয় ক্ল্যাসিক দ্বৈরথ। কোয়ার্টার ফাইনালের স্নায়ুর পরীক্ষায় টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা। টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচটির ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছিল ২-২ সমতায়। অতিরিক্ত সময়ে কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। নার্ভে কাঁপন ধরানো টাইব্রেকারে ভ্যান ডাইক আর বার্ঘুইসের গোল ঠেকিয়ে আলবিসেলেস্তেদের নায়ক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। অন্যদিকে, এনজো ফার্নান্দেজ ছাড়া আর্জেন্টাইন পেনাল্টি টেকারদের সবাই নোপার্টকে বোকা বানাতে সমর্থ হলে ২০১৪ সালের খেলার পুনরাবৃত্তি ঘটায় আলবিসেলেস্তেরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই নেদারল্যান্ডস ছিল হিসেবি ও কৌশলী। বলের দখলের সাথে আক্রমণেও ভীতির সঞ্চার করেছে ডাচরা। কিন্তু প্রথমার্ধ শেষে ডাচদের চেয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কারণ, মেসি-ম্যাজিক কে আটকাতে পারে! নাহুয়েল মলিনাকে দিয়ে আর্জেন্টাইন জার্সিতে প্রথম গোল করিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় আলবিসেলেস্তেরা।
লিওনেল মেসির পেছনে ছিলেন নাথান আকে। কিন্তু ডি বক্সে এগিয়ে আসা নাহুয়েল মলিনার দিকে স্বপ্নের এক রিভার্স পাস বাড়ান মেসি। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ঘটে যায় এই জাদু। প্রশ্ন আসতে পারে, মেসি কী উল্টো দিক থেকে আসা মলিনাকে দেখলেন! তবে জাদুর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া গেলেও মেসির এই বুদ্ধিদীপ্ত পাসের রহস্য বোধহয় একটিই- পাসটা ছিল মেসির। ডাচরা অনেকভাবেই মেসিকে নিষ্ক্রিয় রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু মেসির অবিশ্বাস্য ফুটবলের জবাব সেই মুহূর্তে ছিল না ভ্যান ডাইকদের কাছে। আর এই দৃশ্যের শেষ অংশে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন ফুল ব্যাক নাহুয়েল মলিনা। নীল-সাদা জার্সিতে এটিই মলিনার প্রথম গোল।
এক গোলে পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় ডাচরা। অনেকটাই খেলার ধারার বিপরীতে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি পায় লিওনেল স্কালোনির দল। মেসির বুদ্ধিদীপ্ত পেনাল্টিতে ২-০ গোলে লিড নিয়ে উদযাপনের উপলক্ষ্যই তৈরি করেছিল আলবিসেলেস্তারা। তবে দুই গোলের অগ্রগামিতাও ধরে রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ওয়েগহর্স্ট ৮৩ মিনিটে করা দারুণ হেডারে ব্যবধান কমায় নেদারল্যান্ডস। আর অতিরিক্ত সময়ের ১১ মিনিটে, অনুমিতভাবে ম্যাচের শেষ মিনিটে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে বুদ্ধিদীপ্ত গোল থেকে আর্জেন্টাইনদের উদযাপন থামিয়ে দেন সেই ওয়েগহর্স্ট।
ম্যাচ যখন ইনজুরি টাইমের একদম শেষ দিকে, তখন আর্জেন্টিনার পেনাল্টি বক্সের বাইরে ডাচ খেলোয়াড়কে ফাউল করেন জার্মান পেজেল্লা। সুবিধাজনক অবস্থান থেকে ফ্রি কিকে সরাসরি শট না নিয়ে আলতো করে পাস বাড়ান বার্ঘুইস। আর সেই বল আয়ত্তে নিয়ে আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ বানিয়ে দেন ওয়েগহর্স্ট। অতিরিক্ত সময়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল দুই দলের শারীরিক খেলা আর হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি। পুরো ম্যাচে বেশ কয়েকবারই হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়িয়েছেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। রেফারি মাতেও লাহোজ আর্জেন্টিনার ৮ জনকে এবং ৭ ডাচ খেলোয়াড়কে দেখান হলুদ কার্ড! আর পেনাল্টি কিকের মাঝে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড পান ডামফ্রাইস।
অতিরিক্ত সময়ে খেলার কোনো ফল আসায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও অপেক্ষা করছিল দারুণ নাটক। ডাচদের প্রথম শটটি নিয়েছিলেন ভ্যান ডাইক। কিন্তু, দারুণ এক ফিস্ট করে তাকে গোল বঞ্চিত রাখেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শটটি নেন লিওনেল মেসি, প্রথম শটেই দলকে এগিয়ে নেন তিনি। ডাচদের হয়ে ২য় শটটি নেন বার্ঘুইস। দুর্দান্ত সেইভে তাকেও গোল বঞ্চিত রাখেন এমিলিয়ানো। এ পরিস্থিতিতে বেশ চাপে পড়ে যায় ডাচ শিবির। আর্জেন্টিনাকে ২য় গোলটি এনে দেন পারেদেস। ডাচদের হয়ে প্রথম গোলটি করেন কপমেইনারস। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৩য় গোলটি এনে দেন মন্টিয়েল। ডাচদের হয়ে ২য় গোলটি দেন ওয়েগহর্স্ট। এরপর, পোস্টের বাইরে মেরে গোল বঞ্চিত থাকেন এনজো ফার্নান্দেস। এ সময়, লুক ডি ইয়ং গোল দিলে ৩-৩ সমতায় আসে ম্যাচ। শেষ শটটি নিতে আসেন লাউতারো মার্টিনেজ। এবার আর তিনি কোনো ভুল করেননি। নোপার্টকে তিনি পরাস্ত করা মাত্রই লুসাইলে শুরু হয়ে যায় নীল-সাদা উৎসব।
/এসএইচ
Leave a reply