গত বছরের জুলাইয়ে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধরত অবস্থা থেকে পালিয়েছিলেন কুখ্যাত ভাড়াটে যোদ্ধাদল ওয়াগনার গ্রুপের সাবেক কমান্ডার আন্দ্রে মেদভেদেভ (২৬)। সম্প্রতি ফোনে দ্যা গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন কেন ও কোন পরিস্থিতিতে তিনি ফ্রন্টলাইন থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দ্যা গার্ডিয়ানকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে আন্দ্রে মেদভেদেভ বলেন, আমি রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বাখমুতে ৭ম অ্যাসল্ট ডিট্যাচমেন্টের ৪র্থ প্লাটুনে যুদ্ধ করেছি। ফ্রন্টলাইন থেকে চলে আসার পর একটি রুশ মানবাধিকার সংগঠন আমাকে নরওয়েতে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ফ্রন্টলাইন থেকে পালিয়ে কিছুদিন রাশিয়ায় আত্মগোপনে ছিলাম আমি।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে আসার ব্যাপারে মেদভেদেভ জানান, মাসের পর মাস যুদ্ধের নৃশংসতা দেখা ও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যখন আমাকে বারবার পুনঃনিয়োগ করা হচ্ছিলো তখনই আমি ফ্রন্টলাইন থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই ও পরিকল্পনা শুরু করি। ওরা এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
ওয়াগনার গ্রুপ সম্পর্কে মেদভেদেভ বলেন, ওয়াগনার মূলত দাগী আসামিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মার্সেনারি গ্রুপ। বাহিনীর র্যাংক শক্তিশালী করতে ৪০ হাজার দাগী আসামিকে নিয়োগ দিয়েছে ওয়াগনার হাইকমান্ড।
বাখমুতে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মেদভেদেভ বলেন, ইউক্রেনীয়দেরকে মানুষ মনে করে না ওয়াগনার সদস্যরা। তার থেকেও বড় সমস্যা ছিল বাহিনীর ভেতরেই। খুবই তুচ্ছ কারণে জুনিয়র অফিসারদের জীবন দিতে হয়েছে সিনিয়র অফিসারদের হাতে। বাহিনীতে যেসব আসামিকে পরে নিয়োগ করা হয়েছিল তাদেরকেও মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। ওরা শুধু মাংসের টুকরা, ওরা কামানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বইতো। আমার গ্রুপের বিভিন্ন কাজের জন্য ৪০ জন আসামি দিয়েছিলো হাইকমান্ড। শেষ পর্যন্ত ওদের মধ্যে মাত্র ৩ জন বেঁচে ছিল। পরে আরও আসামি দেয়া হয়, তারাও বাঁচেনি। ওদের প্রতি যে নৃশংস আচরণ করা হতো তা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ইয়াভজেনি নুঝিন (৫৫) নামে হত্যায় অভিযুক্ত এক সৈন্য আমার অধীনে ছিল। সে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইউক্রেনীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে তাকে রাশিয়ার কাছে প্রত্যর্পণ করা হয়। কিন্তু, রুশ কর্তৃপক্ষ স্লেজ হ্যামার দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। নুঝিন ১৯৯৯ সালে এক হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার কারণে গ্রেফতার হয়, তাকে ২৪ বছরের বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। আর মাত্র এক বছর পর ওর শাস্তির মেয়াদ শেষ হতো। কিন্তু, তার আগেই তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় এবং নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
ইউক্রেনীয়দের প্রতি নৃশংসতা প্রসঙ্গে মেদভেদেভ বলেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ধরে নিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের খোলা মাঠে সবার সামনে গুলি করে মারা হতো। কখনও একজন আবার কখনও একাধিক জন একসঙ্গে গুলি করতো।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার রাশিয়া থেকে পালিয়ে নরওয়ে যান ওয়াগনার গ্রুপের সাবেক কমান্ডার আন্দ্রে মেদভেদেভ। সীমান্ত পার হওয়ায় নরওয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে তিনি নরওয়ে সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সাইবেরিয়ার একটি এতিমখানায় বেড়ে ওঠা আন্দ্রে মেদভেদেভ প্রথম কোনো ওয়াগনার যোদ্ধা যিনি যুদ্ধ থেকে পালিয়েছেন। এর আগে, ডাকাতির দায়ে ৪ বছর সাজাও খেটেছেন তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply