দেশ সেরা হাসপাতালগুলো যেন নিজেরাই একেকজন রোগী! একটিতেও নেই আইসিইউ

|

দেশ সেরা হাসপাতাল নওগাঁয়; আর শীর্ষ পাঁচের তিনটিই রাজশাহী বিভাগে। অথচ পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদানের সক্ষমতা নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। একটিতেও নেই জীবন রক্ষাকারী আইসিইউ। নানা সংকটে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি রোগীদের। সীমাবদ্ধতায় হিমসিম অবস্থা চিকিৎসকদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল্যায়নে ২০২২ সালের তালিকায় সেবা দেয়ার শীর্ষে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল। তাদের হিসাবে, বহিঃর্বিভাগে গড়ে দেড় হাজার মানুষ সেবা নেয় এখানে, ভর্তি প্রতিদিন অন্তত আড়াইশ রোগী। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। বিপরীতে অবস্থা বেহাল। মিলছে না ওষুধ ও প্রত্যাশিত চিকিৎসা। সবচেয়ে বড় সংকট মুমূর্ষ রোগী ও জরুরি চিকিৎসা সেবায়।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানালেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও টেস্ট করানো যায় না এখানে। সবকিছুই বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। খাবারের ব্যবস্থাও নেই। পরিবেশও ভাল না। সকাল দশটার মধ্যে ডাক্তার এসে দেখার কথা, দুপুর বারোটা-একটা বেজে গেলেও অনেক সময় ডাক্তাররা আসেন না।

হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স জানালেন, গুরুতর অবস্থায় আসা রোগীদের আমরা সাথেসাথে অন্য কোথাও রেফার করতে পারি না। রাজশাহী বা বগুড়ায় যেতে যেতেই এক্সপায়ার হয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকের অভাবে বেশকিছু জটিল অপারেশনও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কাগজে কলমে হাসপাতালটি আড়াইশো শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি লোকবল ও সুবিধা।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বললেন, লেখা আছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল। কিন্তু, আমার এ হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন আছে বেসিক্যালি ১০০ শয্যার। এখানকার ওষুধ-খাবার যা কিছু; সবকিছুই আসে ১০০ শয্যার অনুমোদনে।

এ ব্যাপারে নওগাঁ সিভিল সার্জন এএইচএম রায়হানুজ্জামান বলেন, বারোটা ক্যাটাগরি আছে, সাইড মনিটরিং আছে। এই সবগুলো ক্যাটাগরিতে আবার নাম্বারিং ও মার্কিং সিস্টেম আছে। আপনি যদি কাজগুলো ঠিকমতো করেন, রিপোর্টিং ঠিকমতো করেন তাহলে সে অনুযায়ী নম্বর পাবেন।

একই অবস্থা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জয়পুরহাট ও তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের। সাধারণ অপারেশন হলেও মেলে না ওষুধ। চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছাড়েন বেশিরভাগ রোগী। আর, হাসপাতালে দায়িত্বরতরা বলছেন, প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নেই; তাই নিরুপায় তারা।

কয়েকজন রোগীর স্বজনের অভিযোগ, ডাক্তাররা আমাদেরকে বললেন যে এখানে টেস্ট করানোর কোনো যন্ত্রপাতি নাই। তাই, আমরা বগুড়ায় নিয়ে যাচ্ছি।

আরেকজনের অভিযোগ, তিনি সাধারণ সর্দি-কাশির ওষুধও পাননি।

এ প্রসঙ্গে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান মণ্ডল বলেন, রোগীর সংখ্যা এবং সার্ভিস প্রোভাইডারের সংখ্যায় ব্যাপক গরমিল আছে। সার্ভিস দেয়ার জন্য আরও বেশি মানুষ দরকার।

সেবার মানসহ বেশকিছু সূচকের ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোকে মূল্যায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কয়েক বছর ধরেই সেই তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে নওগাঁ, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply