যেসব কারণে নিষিদ্ধ আবু নাঈম সোহাগ

|

ঠিক কি অপরাধের সাঁজা পেলেন আবু নাইম সোহাগ? মূলত ৪টি দুর্নীতির কথা বলেছে ফিফা। জার্সি, ফুটবল, টিকিট ও ঘাস কাটার মেশিন কেনায় হয়েছে জালিয়াতি। সব মিলে ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেনে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে ফিফা।

আবু নাইম সোহাগের ১ নম্বর অপরাধ: জার্সি ক্রয়ে অনিয়ম

২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশ দলের আবাসিক ক্যাম্প ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচের জন্য কিছু ক্রীড়া পরিধেয় সামগ্রী ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি। সে জন্য দরপত্র জমা দেয় স্পোর্টস লিংক, স্পোর্টস কর্নার ও রবিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। বিডিংয়ে মালামাল সরবরাহের কাজ পায় স্পোর্টস লিংক। প্রায় ৩২ লাখ টাকার পণ্য সরবরাহ করে বাফুফে। কিন্তু ফিফার তদন্তে দেখা যায়, তিনটি প্রতিষ্ঠান মূলত একই। তিন বিডেই কোটেশন শব্দটি একইভাবে লেখা, আর প্রতিটিরই বানান ভুল! দু’টি বিডের বক্তব্য শুরু হয়েছে একই কথা দিয়ে। তিনটি দরপত্রের ডিজাইন একই রকম। রবিন এন্টারপ্রাইজের দরপত্রে যে ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে, সেটি ভুয়া। স্পোর্টস কর্নার আর স্পোর্টস লিংক এর মালিক আবার একই ব্যক্তি।

২য় অনিয়ম: ফুটবল কেনা

২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকায় ৪০০টি ফুটবল কেনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবল সরবরাহ করতে দরপত্র জমা দেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এইচ ইউ জামান ট্রেডিং এবং ওফেলিয়াস ক্লোজেট। কাজ পায় ওফেলিয়াস। আবু নাইম সোহাগের সরবরাহ করা কাগজে লেখা আছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্রীড়াপণ্য সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু ফিফার কন্ট্রোল রিস্কের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওফেলিয়াস ক্লোজেটের যে ঠিকানা দেয়া আছে সেটি ভুয়া। তারা কোনোভাবেই ফুটবল সরবরাহের সাথে জড়িত নয়।

৩য় অনিয়ম: বিমানের টিকিট কেনায় দুর্নীতি

২০১৯ সালে জাতীয় দলের ওমান সফরের বিমানের টিকিটে কেনাতেও করা হয়েছে দুর্নীতি। এই কাজের জন্য দরপত্র দেয় আল মারওয়া, পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস। কিন্তু এগুলো মূলত নকল। কারণ তিনটি দর প্রস্তাবই শুরু হয়েছে একই কথা দিয়ে শুরু, সবক’টিতেই রুট বানানটি ভুল। ফিফার তদন্তে বলা হয়, বাস্তবে পূরবী এবং মাল্টিপ্লেক্স নামের প্রতিষ্ঠান দু’টি কখনোই বাফুফের সঙ্গে কাজ করেনি। এছাড়াও ঘাস কাটার যন্ত্র কেনাতেও করা হয়েছে অনিয়ম।

৪র্থ অনিয়ম: ঘাস কাটার যন্ত্র কেনায় দুর্নীতি

২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৪১২ ডলার ব্যয় করে (প্রায় দেড় লাখ টাকা) ঘাস কাটার যন্ত্র কেনে বাফুফে। দু’টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়। একটি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার, আরেকটি শোভা এন্টারপ্রাইজ। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার কাজটি পায়। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবু নাঈম সোহাগ কার্যাদেশ দেয়ার দুই দিন পর শারমিন এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়।

এখানে পাওয়া অনিয়মের মধ্যে আছে বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নামের বানানে ভুল। শোভা এন্টারপ্রাইজ আর শারমিন এন্টারপ্রাইজের দরপ্রস্তাব দেখতে একই রকম। শারমিন এন্টারপ্রাইজে যোগাযোগ করলে তারা নিজেদের শোভা এন্টারপ্রাইজ হিসেবে পরিচয় দেয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সুতরাং, সব দরপত্রই একই জায়গা থেকে করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, কেন এই অনিয়মের কারণে সোহাগ নিষিদ্ধ? অন্য কেউ নয় কেন? দুর্নীতির যে ঘটনা ঘটেছে তার সব ডকুমেন্ট স্বাক্ষর করেছেন আবু নাঈম সোহাগ। ফিফার মতে, ফেডারেশনের প্রশাসনিক কার্যক্রমের দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের কাঁধে বর্তায়। সেই সাথে, বাফুফে গঠনতন্ত্রের ৫৯ ধারায়ও লেখা আছে, ফেডারেশনের হিসাব ব্যবস্থাপনা ও ফিফার যোগাযোগের দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের। আর তাই, এই সাজা পেয়েছেন আবু নাইম সোহাগ।

আরও পড়ুন: ‘সাবেক’ হয়ে গেলেন সোহাগ! নেই কক্ষের নেমপ্লেট

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply