এমটিএফই কেলেঙ্কারি: যমুনার ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’র প্রশ্নের জবাবে যা জানালো বাইন্যান্স

|

সম্প্রতি কানাডা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) ক্রিপ্টোক্যারেন্সি লেনদেনের প্লাটফর্ম বাইন্যান্স ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাইন্যান্স নিজেও বের করতে পারেনি ঠিক কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমটিএফই।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং নাইজেরিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় এমটিএফই। বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে থেকেই ‘এমটিএফই’ এর চলমান এই প্রতারণা সম্পর্কে তারা আভাস পেয়েছে এবং তাদের অনুসন্ধানী দল কর্তৃপক্ষকে এমটিএফই সম্পর্কে সতর্ক করে। তবে গুগোল প্লে-স্টোরে ৪.১ রেটিং এবং প্রায় ২৪ হাজার ব্যবহারকারীর মতামত থাকায় ‘এমটিএফই’ প্লাটফর্মটিকে তারা অতি সন্দেহের তালিকায় রাখেনি।

‘এমটিএফই প্রতারণা’র পর যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী’ বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে।

গত ২৮ আগস্ট বাইন্যান্সের গ্লোবাল পিআর জেসিকা জং-কে মেইল পাঠানো হয়। সেখানে বাংলাদেশের সাথে ‘এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলো ছিল-

১. সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে এমটিএফই নামে একটি প্রতিষ্ঠান অসংখ্য মানুষের কাজ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট খুলে। কীভাবে এমটিএফই এই কাজটি করলো?

২. বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষের সাথে এমটিএফই’র কী ধরনের চুক্তি ছিল?

৩. এই ঘটনায় বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ কি দায় এড়াতে পারে?

৪. বাইন্যান্স প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এমটিএফই যে প্রতারণা করেছে, সেটি নিয়ে বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

এই মেইলের একদিন পর বাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ থেকে ফিরতি মেইলে, বাইন্যান্স প্লাটফর্ম এমটিএফই সম্পর্কে তার অবস্থান বিস্তারিত উল্লেখ করে।

ফিরতি মেইলের তারা জানায়, গত ২৩ শে আগস্ট ২০২৩-এ, আমাদের বিশ্বস্ত আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের একজন যার সাথে আমরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছি, তারা বাইন্যান্স ইনভেস্টিগেশন টিম কে ‘এমটিএফই’ কেলেঙ্কারি সম্পর্কে সচেতন করেছিল। সংস্থাটি ‘এমটিএফই’ প্রতারণা সম্পর্কিত একটি সংবাদ নিবন্ধও শেয়ার করেছিল এবং তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অনুরোধ করছিল।

কিন্তু ততক্ষণে, এমটিএফই কেলেঙ্কারি নিয়ে অসংখ্য সংবাদ নিবন্ধের কভারেজ হয়ে গিয়েছিল এবং এটি একটি পঞ্জি স্ক্যামের মতো বলে মনে হয়েছিল। অবাস্তবভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ আয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে এই পদ্ধতির মধ্যমে। প্রায়শই প্রাথমিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করা হয়ে থাকে। এরপর হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন করে।

এটা লক্ষণীয় যে, এমটিএফই গুগল প্লে-স্টোরে ৫-এর মধ্যে ৪.১ রেটিং অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং একই সময়ে ২৪ হাজারের বেশি রিভিউর সাথে তাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট যেমন মিডিয়াম, ফেজবুক, ইউটিউব এবং লিঙ্কড ইন প্রচার করছে।

‘এমটিএফই’ অ্যাপ্লিকেশনটি এমনকি অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে আপলোড করা হয়েছিল যেখানে এটি আইফোনের জন্য বৈধ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। এইগুলি দেখায় যে কীভাবে ভালভাবে তৈরি স্ক্যামগুলি পুরনো এবং নতুন বিনিয়োগকারী উভয়কেই একইভাবে প্রতারিত করতে পারে৷

‘এমটিএফই’ ‘mtfe.ca’ ডোমেনের অধীনে কাজ করছিল। এমনকি বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভারত এবং শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশে তার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করার সময় কানাডায় লাইসেন্স পাওয়ার দাবিও প্রচারিত করেছিল।

দুর্ভাগ্যবশত, এই দেশগুলির ব্যবহারকারীরা একই ধরনের পরিণতি ভোগ করেছে ইতিমধ্যেই। যদিও অন্টারিও সিকিউরিটিজ কমিশন একটি বিবৃতি জারি করেছিল ২০২৩ সালের জুনের শেষের দিকে যে, ‘এমটিএফই’ সিকিউরিটিজ ব্যবসায় জড়িত হওয়ার জন্য অন্টারিওতে নিবন্ধিত নয়। আমরা ‘এমটিএফই’ প্রতারণা স্কিম তদন্ত করতে আমাদের বিশ্বস্ত আইন প্রয়োগকারী অংশীদারের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।

দুর্ভাগ্যবশত, চলমান তদন্তে সংবেদনশীল বিবরণ জড়িত এবং এইভাবে, আমরা এই সময়ে আরও তথ্য প্রকাশ করতে অক্ষম। তবে, আমরা তদন্তকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে সহায়তা করতে পারি যদি তারা আপনাকে আরও তথ্য দিতে চায়।

বাইন্যান্স মুখপাত্র থেকে অন রেকর্ড প্রতিক্রিয়া:

“বাইন্যান্স প্লাটফর্ম ‘এমটিএফই’ এর সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক, চুক্তি, বা এফিলিয়েশন বজায় রাখে না। এবং ‘এমটিএফই’-কে বাইন্যান্স পরামর্শ দেয় এমন কোনো দাবি বা তথ্যও সঠিক নয়।

বাইন্যান্স হল একটি নেতৃস্থানীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ যা ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ মানগুলি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়কে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমাদের অনবোর্ডিং প্রক্রিয়ায় একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, বিশদ বিবরণ নিশ্চিত করা, প্রাথমিক পরিচয় তথ্য প্রদান, ঠিকানা যাচাইকরণ, একটি কমপ্লায়েন্স প্রশ্নাবলী সম্পূর্ণ করা এবং অনুমোদন প্রাপ্তিসহ একাধিক পদক্ষেপ জড়িত।

এটি আমাদের ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা এবং যাচাই করা এবং অর্থ পাচারের সাথে সম্পর্কিত যে কোনও সম্ভাব্য ঝুঁকি বোঝার জন্য নিশ্চিত করে।

নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য, বাইন্যান্স সরাসরি অনলাইনে সরকারী ডাটাবেস বা অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য তৃতীয় পক্ষের ডাটাবেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য যাচাই করে। যেমন: ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন, ব্রাজিল, ইত্যাদি

আমরা নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করতে আমাদের গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ এবং ওয়াচলিস্ট স্ক্রিনিংয়ের মতো উন্নত যাচাইকরণ প্রক্রিয়া স্থাপন এবং বিভিন্ন নামিদামি (RegTech) বিক্রেতাদের ব্যবহার করি।

আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত, সমস্ত বাইন্যান্স অ্যাকাউন্টের জন্য যাচাইকৃত কেওয়াইসি (KYC) তথ্য বাধ্যতামূলক।

আমাদের কমপ্লায়েন্স টিম তার প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সন্দেহজনক আচরণ শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ নিশ্চিত করার জন্য একটি ব্যাপক পরিসরের ব্যবস্থা প্রয়োগ করে। বাইন্যান্স বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং ইন-হাউস স্ক্রিনিং টুল ব্যবহার করে রিয়েল টাইমে প্রতিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ডিপোজিট এবং তোলার লেনদেন কঠোরভাবে স্ক্রিন করে।

আমাদের স্ক্রিনিং সরঞ্জামগুলিতে ‘এমটিএফই’ কে একটি স্ক্যাম সত্তা হিসাবে নির্দেশিত হওয়ার সাথে সাথে, অবৈধ ঠিকানাগুলির সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এমন অ্যাকাউন্টগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা হবে এবং ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করা হবে।

বাইন্যান্স আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথ্য আদান-প্রদান, তদন্তে সহায়তা এবং একটি নিরাপদ ও অনুগত ট্রেডিং পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাইন্যান্স কাজ করছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply