বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দৌঁড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম এবং মিডল অর্ডার ব্যাটার সৌদ শাকিলের অর্ধশতকের ওপর ভর করে প্রোটিয়াদের ২৭১ রানের লক্ষ্য দিয়েছে পাকিস্তান। এই রান তোলার ক্ষেত্রে পাক ব্যাটার মোহাম্মদ নাওয়াজ এবং শাদাব খানের ছোট ছোট ইনিংসগুলোর মাহাত্ম্যও কম নয়।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। হাসান আলী ও উসামা মীরের পরিবর্তে এ ম্যাচে একাদশে ফেরানো হয় মোহাম্মদ নাওয়াজ ও ওয়াসিম জুনিয়রকে। অন্যদিকে, প্রোটিয়াদের একাদশেও আসে তিনটি পরিবর্তন। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সাথে এ ম্যাচের একাদশে ফেরেন স্পিনার তাবরিজ শামসি ও পেসার লুঙ্গি এনগিদি।
ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেননি দুই পাক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক। শফিক দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই এনগিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ধরা পড়েন। তার উইকেটটি শিকার করেন বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মার্কো জ্যানসেন। তার বিদায়ে ২০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। তিনি ফেরেন মাত্র ৯ রান করে। এরপর তিনে নামা অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে ইমামের ১৮ রানের জুটির পর আবারও জ্যানসেনের আঘাত। এবার তার বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমাম। ফেরার আগে তিনি ১৮ বলে দুই চারের মারে ১২ রান করেন। ৬ দশমিক ৩ ওভারে মাত্র ৩৮ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর দুই ব্যাটিং স্তম্ভ বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান আশা দেখাচ্ছিল পাকিস্তানকে। এই জুটি স্বাচ্ছন্দ্যে এগুচ্ছিলেনও। ৪৮ রানের জুটিটি ভাঙ্গেন পেসার কোয়েতজে। তার বলে উইকেটরক্ষক ডি কককে ক্যাচ দিয়ে রিজওয়ান ফিরলে ভাঙ্গে এই জুটি। ফেরার আগে ২৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছয়ের মার।
এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেয়া হয় ইফতেখারকে। তবে উপরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে সেটি লুফে নিতে পারেননি তিনি। পারেননি তার ওপর করা ভরসার প্রতিদান দিতে। তাবরিজ শামসির বলে ক্লাসেনের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে ৩১ বলে মাত্র ২১ রানের মন্থর ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল একটি ছয় ও একটি চারের মার। ইফতেখারের উইকেট শিকারের মাধ্যমে শুরু হয় শামসির উইকেট উদযাপন। এরপর তিনি ফেরান অধিনায়ক বাবর আজমকে। সময় যেন ভালো যাচ্ছে না বাবরের। মাঠে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না, দলও হারতে হারতে খাদের কিনারে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। আগের ম্যাচেও অর্ধশতক পেয়েছিলেন বাবর। এই ম্যাচেও ৫০ রান পূর্ণ করেই শামসির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন এই ক্লাসিক ব্যাটার।
৬৫ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি চার চারে এবং এক ছয়ে। পাক অধিনায়কের উইকেট প্রাপ্তিতে ভাগ্যও বেশ সহায় ছিল প্রোটিয়াদের। শামসির বলে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিলেও আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। অনেক ভেবেচিন্তে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। পরে রিভিউয়ে দেখা যায় বল উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ফলে তার বিদায়ে ১৪১ রানেই ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তখনই শঙ্কা জেগেছিল আরেকটি বড় ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান। তবে এরপরই দলের হাল ধরেন সৌদ শাকিল ও শাদাব খান।
এই জুটি সংগ্রহ করেন ৮৪ রান। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে কোয়তজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন শাদাব খান। ৩৬ বলের এই ইনিংসে তিনি তিনটি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকান। অপরপ্রান্তে থাকা সৌদ শাকিল তুলে নেন অর্ধশতক। তবে তিনি অর্ধশতকের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫২ রানে তাকে ফেরান শামসি। শামসির তোপে ২৪০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল পাকিস্তান। তবে শেষদিকে নাওয়াজের ২৪ রানের ওপর ভর করে ২৭০ রান তুলতে পারে পাকিস্তান। শামসি-জ্যানসেনদের তোপে ২০ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। প্রোটিয়াদের পক্ষে শামসি ৪ উইকেট, জ্যানসেন ৩টি, কোয়েতজে দুইটি এবং এনগিদি এক উইকেট শিকার করেন।
/এনকে
Leave a reply