উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১ উইকেটে হারলো পাকিস্তান

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ উইকেটে হেরেছে পাকিস্তান। এই হারে সেমিফাইনালের লড়াই থেকে এক প্রকার ছিটকেই গেছে বাবর আজমের দল। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের দেয়া ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। দলের পক্ষে এইডেন মার্করাম করেন সর্বোচ্চ ৯১ রান। এ নিয়ে চলতি আসরে টানা চার ম্যাচ হারলো বাবর আজমের দল।

পাকিস্তানের দেয়া ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তবে তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শাহিন শাহ আফ্রিদি। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের হাতে ধরা পড়েন এই ম্যারকুটে ব্যাটার। ফেরার আগে ১৪ বলে পাঁচ চারের মাধ্যমে ২৪ রান করেন। তার বিদায়ের সময় মাত্র ৩ দশমিক ৩ ওভারে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৪ রানে।

অসুস্থতার কারণে আগের দুইম্যাচে একাদশে ছিলেন না প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। এ ম্যাচে মাঠে নামলেও ব্যাটিংটা রাঙ্গাতে পারেননি তিনি। ওয়াসিমের শিকার হয়ে ফেরার আগে করেন ২৭ বলে ২৮ রান। চারটি চার ও একটি ছক্কা মারা এই ব্যাটার আউট হন সৌদ শাকিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৬৭ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এরপর ডুসেনের সঙ্গে জুটি গড়েন চলতি আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা প্রোটিয়া মিডল অর্ডার ব্যাটার মার্করাম। ৫৪ রানের এই জুটি ভাঙ্গেন তরুণ লেগস্পিনার ওসামা মীর। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ২১ রানে ফিরে যান ডুসেন। তিনি ৩৯ বল খেলে একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি। তবে অন্যদিকে, সাবলীলভাবে ব্যাটিং করেন মার্করাম। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মারকুটে ব্যাটার ক্লাসেন এই ম্যাচে দ্রুতই ফিরেছেন। ওয়াসিমের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে মাত্র ১২ রান করেছেন তিনি। ১৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা।

সেই চাপ দারুণভাবে সামলান মার্করাম ও ডেভিড মিলার। শাহিন শাহ’র বলে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ২৯ রানে মিলার ফিরলে ভাঙ্গে ৭০ রানের জুটি। ২০৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ব্যাটে এসে জ্যানসেন খেলেন ১৪ বলে ২০ রানের অতি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। অপর পাশে মার্করাম সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন। তবে সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থাকতে ওসামার বলে বাবরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মার্করাম। তার ৯১ রানের ইনিংসটিতে ছিল সাতটি চার ও তিনটি ছয়। এই রান করতে তিনি খেলেন ৯৩ বল।

৪০ দশমিক ২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রানে পৌঁছানো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে এরপরই শুরু হয় নাটকীয়তা। শেষ ৫৮ বলে প্রোটিয়াদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১ রান। হাতে তখনও তিন উইকেট। ৪১ দশমিক ১ ওভারে আফ্রিদির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোয়েতজে। ২৫০ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়েছিল প্রোটিয়ারা। তবে এনগিদি ও কেশব মহারাজের দাঁতে দাঁত কামড়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন।

হ্যারিস রউফের বলে এনগিদি ডিফেন্স করতে গেলে বলে চলে যায় বোলারের দিকে। ড্রাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচটি লুফে নেন হ্যারিস। জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে এনগিদি বিদায় নিলে জয়ের আশায় বুক বাধেন বাবর-আফ্রিদিরা। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন মহারাজ-শামসি। ইনিংসের ১৬ বল বাকি থাকতে নাওয়াজের বলে চার মেরে জয়সূচক রানটি তুলে নেন মহারাজ।

এর আগে, এদিন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। হাসান আলী ও উসামা মীরের পরিবর্তে এ ম্যাচে একাদশে ফেরানো হয় মোহাম্মদ নাওয়াজ ও ওয়াসিম জুনিয়রকে। অন্যদিকে, প্রোটিয়াদের একাদশেও আসে তিনটি পরিবর্তন। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সাথে এ ম্যাচের একাদশে ফেরেন স্পিনার তাবরিজ শামসি ও পেসার লুঙ্গি এনগিদি।

ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেননি দুই পাক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক। শফিক দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই এনগিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ধরা পড়েন। তার উইকেটটি শিকার করেন বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মার্কো জ্যানসেন। তার বিদায়ে ২০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। তিনি ফেরেন মাত্র ৯ রান করে। এরপর তিনে নামা অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে ইমামের ১৮ রানের জুটির পর আবারও জ্যানসেনের আঘাত। এবার তার বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমাম। ফেরার আগে তিনি ১৮ বলে দুই চারের মারে ১২ রান করেন। ৬ দশমিক ৩ ওভারে মাত্র ৩৮ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

এরপর দুই ব্যাটিং স্তম্ভ বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান আশা দেখাচ্ছিল পাকিস্তানকে। এই জুটি স্বাচ্ছন্দ্যে এগুচ্ছিলেনও। ৪৮ রানের জুটিটি ভাঙ্গেন পেসার কোয়েতজে। তার বলে উইকেটরক্ষক ডি কককে ক্যাচ দিয়ে রিজওয়ান ফিরলে ভাঙ্গে এই জুটি। ফেরার আগে ২৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছয়ের মার।

এ ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেয়া হয় ইফতেখারকে। তবে উপরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে সেটি লুফে নিতে পারেননি তিনি। পারেননি তার ওপর করা ভরসার প্রতিদান দিতে। তাবরিজ শামসির বলে ক্লাসেনের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে ৩১ বলে মাত্র ২১ রানের মন্থর ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল একটি ছয় ও একটি চারের মার। ইফতেখারের উইকেট শিকারের মাধ্যমে শুরু হয় শামসির উইকেট উদযাপন। এরপর তিনি ফেরান অধিনায়ক বাবর আজমকে। সময় যেন ভালো যাচ্ছে না বাবরের। মাঠে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না, দলও হারতে হারতে খাদের কিনারে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। আগের ম্যাচেও অর্ধশতক পেয়েছিলেন বাবর। এই ম্যাচেও ৫০ রান পূর্ণ করেই শামসির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন এই ক্লাসিক ব্যাটার।

৬৫ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি চার চারে এবং এক ছয়ে। পাক অধিনায়কের উইকেট প্রাপ্তিতে ভাগ্যও বেশ সহায় ছিল প্রোটিয়াদের। শামসির বলে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিলেও আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। অনেক ভেবেচিন্তে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। পরে রিভিউয়ে দেখা যায় বল উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ফলে তার বিদায়ে ১৪১ রানেই ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তখনই শঙ্কা জেগেছিল আরেকটি বড় ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান। তবে এরপরই দলের হাল ধরেন সৌদ শাকিল ও শাদাব খান।

এই জুটি সংগ্রহ করেন ৮৪ রান। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে কোয়তজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন শাদাব খান। ৩৬ বলের এই ইনিংসে তিনি তিনটি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকান। অপরপ্রান্তে থাকা সৌদ শাকিল তুলে নেন অর্ধশতক। তবে তিনি অর্ধশতকের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫২ রানে তাকে ফেরান শামসি। শামসির তোপে ২৪০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল পাকিস্তান। তবে শেষদিকে নাওয়াজের ২৪ রানের ওপর ভর করে ২৭০ রান তুলতে পারে পাকিস্তান। শামসি-জ্যানসেনদের তোপে ২০ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। প্রোটিয়াদের পক্ষে শামসি ৪ উইকেট, জ্যানসেন ৩টি, কোয়েতজে দুইটি এবং এনগিদি এক উইকেট শিকার করেন। দুর্দান্ত বোলিং করা তাবরিজ শামসি হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply