শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে কিউইদের হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টানা চার জয়

|

চলতি বিশ্বকাপ আসরের শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ১৯৯ রানে অলআউট হয়েছিলো প্যাট কামিন্সের দল। ম্যাচটি হেরেছিলো ৬ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে ১৩৪ রানে। এমন বাজে শুরুর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অজিরা। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পর নিউজল্যান্ডকেও হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) ধরমশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে কিউইদের ৩৮৯ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া। রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি, ডেরিল মিচেল অর্ধশতক এবং শেষ দিকে জেমি নিশামের ঝড়ো ইনিংসের পরও হার এড়াতে পারেনি কিউইরা। নিউজিল্যান্ড হেরেছে ৫ রানে। এ জয়ে সেমিফাইনালের পথ আরও সহজ হলো অজিদের।

অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৮৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় কিউইরা। ৭ ওভারেই ৬০ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের ৭ দশমিক ২ বলে কিউই শিবিরে আঘাত হানেন অজি পেসার হ্যাজলউড। তার বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১৭ বলে ৬ চারে করেন ২৮ রান। দলীয় ৬১ রানে প্রথম উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড ৭২ রানে আরেক ওপেনার ইয়ংয়ের উইকেট হারায়। এবারও হ্যাজলউডের আঘাত। আর ক্যাচ লুফে নেন স্টার্ক।

এরপর বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাচীন রবীন্দ্রর সঙ্গে জুটি গড়েন মিচেল। এই জুটিতে ওঠে ৯৬ রান। অর্ধশতক তুলে নেন মিচেল। তবে অর্ধশতকের পর বেশিক্ষণ মাঠে টিকতে পারেননি এই ব্যাটার। ব্যক্তিগত ৫৪ রানেই তাকে তুলে নেন স্পিনার জাম্পা। ফেরার আগে ৫১ বলের ইনিংসটিতে তিনি ৬টি চার ও একটি ছক্কা মারেন।

সেট হয়েও এই ম্যাচে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। জাম্পার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে তিনি ২২ বলে খেলেন ২১ রানের ইনিংস। দ্রুত ফিরে যান গ্লেন ফিলিপসও। ২৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো কিউইরা তখন রবীন্দ্রর ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো। রবীন্দ্র তুলে নেন এই আসরে নিজের দ্বিতীয় শতক। ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ৮৯ বলে খেলেন ১১৬ রানের ঝলমলে ইনিংস। এই রান তুলতে তিনি ৯টি চারের পাশাপাশি পাঁচবার বল গ্যালারিতে পাঠান।

শেষদিকে জিমি নিশাম ঝড়ে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার ইতিহাস রচনা করা হয়নি কিউইদের। নিশাম ৩৯ বলে ৫৮ রান করে যখন ফেরেন তখন জিততে হলে এক বলে ৬ রান নিতে হতো নিউজিল্যান্ডকে। তবে মিশেল স্টার্কের সেই বলে কোনো রানই তুলতে পারেনি কিউই ব্যাটার ফার্গুসন। এতে ৫ রানের পরাজয় মেনে নিতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রীতিমতো তাণ্ডব চালান অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নারের তাণ্ডবে মাত্র ৮ দশমিক ৫ বলেই দলীয় শতক তুলে নেয় অজিরা। আর ১৫ ওভারেই দেড়শো ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়া। তবে শুরুর তাণ্ডবের পরও ৪ বল বাকি থাকতেই ৩৮৮ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

এ ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দল হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার-হেডের তাণ্ডবে মাত্র ৮ দশমিক ৫ ওভারেই ১০০ পার করে অজিরা। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় তুলে মাত্র ২৮ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। অপরপাশে হেড ২৫ বলেই অর্ধশতক তুলে নেন। ওয়ার্নার-হেডের তাণ্ডবে ১৫ ওভারেই দলীয় দেড়শো রান পূর্ণ করে অজিরা।

১৯ দশমিক ১ ওভার স্থায়ী এই জুটি থেকে আসে ১৭৫ রান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওয়ার্নার গ্লেন ফিলিপসের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। ফেরার আগে ওয়ার্নার ৬৫ বলে ৮১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ছয়টি ছয়ের মার। অন্যপ্রান্তে দুর্দান্ত খেলে সেঞ্চুরি তুলে নেন আরেক ওপেনার হেড। তিনি বিদায়ের আগে করেন ৬৭ বলে ১০৯ রান। তিনি বিধ্বংসী এই ইনিংস খেলার পথে ১০টি চার ও ৭টি ছক্কা হাঁকান। ২৩ ওভারেই ২০০ পূর্ণ তোলে অস্ট্রেলিয়া।

তবে ইনিংস বড় করার মঞ্চ পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মার্শ। স্যান্টনারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে তিনি ৫১ বলে করেন ৩৬ রান। মাঝে কিছুটা ওভার ধীরগতিতে রান তোলেন অজি ব্যাটাররা। এই ম্যাচে স্মিথ-লাবুশানেরাও বড় রান করতে পারেননি। স্মিথ ১৭ বলে ১৮ এবং লাবুশানে ২৬ বলে করেন ১৮ রান। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ম্যাক্সওয়েল এই ম্যাচে ২৪ বলে খেলেন ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস। পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় তিনি এই রান করেন। শেষদিকে অধিনায়ক কামিন্সের ১৪ বলে চার ছক্কা এবং দুই চারে ৩৭ রানের ইনিংসে ভর করে ৩৮৮ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

৪১ দশমিক ২ ওভারে ৩০০ রান পূর্ণ করা অজিরা শেষদিকে কিউই বোলারদের দৃঢ়তায় ৩৮৮ রানেই অলআউট হয়।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply