ম্যাক্সওয়েলের অনবদ্য ২০১*; বিশ্বকাপের সেরা ৫ ইনিংস

|

চলছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। প্রতিটা দলের শেষ হয়েছে ৮টি করে ম্যাচ। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দেখা গেলো, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভীষণ চাপের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে প্রায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে অনবদ্য, অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংসকে ওয়ানডেতে সর্বকালের সেরা ইনিংস বলছেন অনেকে। এমনকি শচীন টেন্ডুলকারের চোখেও এটা তার দেখা সেরা ইনিংস। ম্যাক্সওয়েলের বীরত্বগাঁথার পর সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পাঁচটি ইনিংসে ঘুরে আসা যাক।

মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ) , ১৬৩ বলে ২৩৭*

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটারের নাম মার্টিন গাপটিল। ২০১৫ বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই তারকা ওপেনার। এই দ্বিশকের ইনিংস গড়তে মোটে ১৬৩ বল খেলেছিলেন তিনি। কিউইদের হয়ে ওডিআইতে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান। ওই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ১৪৩ রানে জয় পায়।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম জিম্বাবুয়ে ২০১৫), ১৪৭ বলে ২১৫ রান

মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের ডাকসাইটে নাম ছিল ‘ক্রিস গেইল’। বড় টুর্নামেন্টে বারবার নিজের সেরা রুপ দেখিয়েছেনও তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু থেকে ঝড় তোলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ‘দানব’ ওপেনার। খেলেন ১৪৭ বলে ২১৫ রানের ইনিংস। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ১০ চার আর ১৬ ছক্কায় আসে তার এই দ্বিশতক।

এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৫), ৬৬ বলে ১৬২

২০১৫ বিশ্বকাপে ক্যারিবীয় বোলারদের রীতিমত কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। খেলেছিলেন ৬৬ বলে ১৬২ রানের টর্নেডো-ইনিংস! সেদিন মাত্র দুই বলের জন্য ভাঙ্গতে পারেননি বিশ্বকাপে কেভিন ও’ব্রায়েনের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি। আইরিশ ব্যাটসম্যান করেছিলেন ৫০ বলে সেঞ্চুরি আর ডি ভিলিয়ার্স ৫২ বলে। ওয়ানডেতে এটিই দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড। টর্নেডো-ইনিংসটা ভিলিয়ার্স সাজিয়েছিলেন ১৭ চার ও ৮ ছয়ে।

স্যার ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম শ্রীলঙ্কা, ১৯৮৭), ১২৫ বলে ১৮১ 

১৯৮৭ বিশ্বকাপে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ভিভ রিচার্ডস দেখিয়েছিলেন আরেক ঝলক। বরাবরই খুনে মেজাজে ব্যাট করতে অভ্যস্ত এই ব্যাটার সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ বলে করেছিলেন ১৮১ রান। সেই যুগে এই ইনিংসটি ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য! ওই আসরে তিনি পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়েছিলেন।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ত্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান, ২০২৩), ১২৮ বলে ২০১* রান

প্রায় সব ইনিংসের গল্প তো বলা হলো। এবারের আসরে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অকল্পনীয় এক ইনিংস খেলে। ম্যাক্সওয়েলের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে এখন অন্তত কেউ প্রশ্ন তুলবেন না। অতুলনীয়, নাকি অতিমানবীয়; কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসটিকে?
চেপে বসা আফগানিস্তান, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, একাধিকবার ‘জীবন’ পাওয়া ‘আধা ফিট’ ম্যাক্সওয়েলের হার না মানা মানসিকতাকে অন্য কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাঠে লুটিয়ে পড়ার পর আবারও উঠে দাঁড়ানো এবং দলের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয়া; এসব যখন মনে করবেন, তখন ম্যাক্সওয়েলকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে না রেখে কোনো উপায় থাকে না। শেষপর্যন্ত ১২৮ বলে ২০১* রান করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তারপর মাঠ ছেড়েছেন তিনি। ইনিংসটি বিশ্বকাপের বেস্ট ইনিংস তো বটেই, বরং ওয়ানডে ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply