মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছিল ১৮ বছর বয়সি মেয়েটি। তাই বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে প্রথমে খালে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চেয়েছিল সে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সাক্ষাৎ ফেরেশতা হয়েই যেন সেখানে হাজির হলেন এক জন।
দ্বিতীয় বারে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল সেই কিশোরী। এ বারেও মোক্ষম সময়ে হাজির হয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে দিলেন সেই ‘ফেরেশতা’।
ঘটনাটি মুম্বাইয়ের। সদা ব্যস্ত মুম্বইয়ে যেখানে মানুষ নিজেকেই সময় দিতে পারে না, সেখানে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর দু’বার অচেনা এক কিশোরীর প্রাণ বাঁচালেন এক মাঝবয়সি ব্যক্তি। মুম্বাইয়ের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। মেয়ের প্রাণরক্ষার জন্য সৈয়দ নাসের হুসেন নামে ওই ব্যক্তির কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ওই কিশোরীর বাবা-মায়ের।
মুম্বইয়ের দেওনরের বাসিন্দা ৪৩ বছরের সৈয়দ নাসির হুসেন সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নিজের দোকান বন্ধ করে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। ভাসি ব্রিজের উপরে তিনি ওই কিশোরীকে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে দেখেন। তখনই সন্দেহ হয় নাসেরর। একটু পরেই তিনি লক্ষ করেন, ওই কিশোরী সেতুর রেলিং টপকে নীচের খালে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। শেষ মুহূর্তে তার হাত টেনে ধরেন নাসের। রক্ষা পায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী।
এই ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে ভিড় জমে যায়। নাসির অবশ্য মেয়েটিকে একা না ছেড়ে দিয়ে তার পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা, কলেজের নাম জানতে চান। মেয়েটি তাঁকে জানায়, প্রেমঘটিত কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।
প্রথমে ছাত্রীটি নাসিরকে তার বাড়ির সঠিক ঠিকানাও জানাতে চায়নি। অনেক বোঝানোর পরে অবশেষে সে জানায়, মানখুর্দে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে সে।
ওই ছাত্রীকে নিজের বাইকে বসিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন নাসির। প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ওই ছাত্রীর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে, ছাত্রীটির বাবা তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। সেই সুযোগেই আত্মহত্যার করার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ওই ছাত্রী।
মেয়েটির বাবা-মা তখনও না ফেরায় প্রতিবেশীর থেকে চাবি নিয়ে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে রেখে ফেরার পথ ধরেন নাসির। কিন্তু কিছুটা আসার পরই তাঁর মনে সন্দেহ হয়। একা একা মেয়েটি যদি ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করে? সেই আশঙ্কা থেকেই মেয়েটির বাড়ি ফিরে যান নাসির। দরজা ধাক্কা দেওয়া সত্ত্বেও ছাত্রীটি না খোলায় প্রতিবেশীদের ডেকে দরজা ভাঙেন নাসির। দেখা যায়, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে ওই কিশোরী।
দ্রুত ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি হাসপাতাল ঘুরে অন্য হাসপাতালে ভর্তির পরে আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা।
নাসির জানিয়েছেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই এই কিশোরীকে বাঁচাতে পেরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ভাসি ব্রিজটি একটি ‘সুইসাইড পয়েন্ট’ হয়ে উঠেছে। ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার জন্য অনেকেই ওই সেতুকে বেছে নিচ্ছেন। দু’বছর আগে আরও একটি মেয়েকে একই ভাবে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সে বারে অবশ্য পুলিশের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারে পুলিশ ডাকারও সময় ছিল না। নাসিরের কথায়, ‘‘খালি পায়ে, অন্যমনস্ক ভাবে সেতুর রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া। দু’বছর আগের সেই মেয়েটির সঙ্গে এ বারের এই ছাত্রীরও অনেক মিল দেখতে পেয়েই সতর্ক হই।’’
সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি নাসির। সেই জন্যই মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘এক বার নয়, পর পর দু’বার উনি আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ওঁকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য ভাষা নেই আমার কাছে।’’
হাসপাতালে ভর্তি ছাত্রীর সঙ্গে দু’বার দেখা করেছেন নাসির। তার বাবার সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। নাসির বলেন, ‘‘আমি ওর বাবাকে বলেছি যাতে ওর পড়াশোনায় কোনও সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে। ওকে জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। যাতে একজন পুরুষের বিশ্বাসঘাতকতা মানেই যে জীবনের শেষ নয়, সেটা ও বুঝতে পারে।’’
Leave a reply