বিপিএলের গ্রুপ পর্বে দেশি তারকাদের পারফরম্যান্স কেমন?

|

সাকিব, তামিম ও শরীফুল

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এর গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মাঠে গড়াবে প্রথম কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর ম্যাচ। আসরে বিদেশি খেলোয়াড়দের থেকে দেশি ক্রিকেটাররাই বেশি আলো ছড়িয়েছেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই দেশি খেলোয়াড়। আর উইকেট শিকারির তালিকার সেরা ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজন রয়েছেন বিদেশি ক্রিকেটার।

আসরে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৯১ রান করে সবার ওপরে রয়েছেন ফরচুন বরিশালের দলপতি তামিম ইকবাল। তার গড় ৩২ দশমিক ৫৮। ১৫টি ছক্কা ও সর্বোচ্চ ৪০টি চারের মার এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। গ্রুপ পর্বে দুইটি অর্ধশতক করেছেন এই টাইগার ড্যাশিং ওপেনার। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৭১। তামিমের বরিশাল শেষ চার নিশ্চিত করেছে। তাই তামিম আসরে কতো রানে থামবেন সেটির জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

রান সংগ্রাহকদের তালিকার দুইয়ে রয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তাওহীদ হৃদয়। জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন ফর্ম হারিয়ে ধুকতে থাকা হৃদয় বিপিএলে ফর্মে ফিরেছেন। বলা যায়, তার পুরোটাই ঢেলে দিচ্ছেন কুমিল্লার জন্য। তামিমের চেয়ে মাত্র ৮ রান কম (৩৮৩) করেছেন হৃদয়। তার ব্যাটেই চলতি আসরে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান দর্শকরা। এক সেঞ্চুরি ও এক অর্ধশতক করেছেন তিনি। গড় ৩৮ দশমিক ৩০। আর স্ট্রাইট রেটও ঈর্ষনীয় ১৪৯ এর ওপরে। ২০টি ছক্কা ও ২৯টি চার এসেছে তার ব্যাট থেকে। তবে ১২ ইনিংসে ব্যাট হাতে নামা হৃদয় শূন্য রানে ফিরেছেন তিনবার। আসরে এখনও কমপক্ষে দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন হৃদয়।

৩৮২ রান নিয়ে তিনে আছেন এই আসরের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক তানজিদ হাসান তামিম। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটার ১১ ইনিংসে তুলেছেন এই রান। ৩৪ দশমিক ৭২ গড়ে এবং ১৩৬ দশমিক ৪২ স্ট্রাইট রেটে ব্যাট করা জুনিয়র তামিম এখন পর্যন্ত তাওহীদ ‍হৃদয়ের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ২০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। চার মেরেছেন ৩২টি। ১১৬ রানের ইনিংস খেলা তামিম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন দুইবার।

চলতি আসরে সবচেয়ে বেশি চারবার অর্ধশতকের দেখা পাওয়া দুর্দান্ত ঢাকার ব্যাটার অ্যালেক্স রস ৩৫২ রান করে রান সংগ্রাহকের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন বরিশালের মিডল অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ১২ ইনিংসে মুশফিকের রান ৩১৪। তিনটি অর্ধশতক পাওয়া মুশফিকের সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৬৮। গড় ২৮ দশমিক ৫৪ এবং স্ট্রাইক রেট ১২৩ দশমিক ৬২। ১০টি ছয়ের পাশাপাশি ২৪টি চারের মারও এসেছে মিস্টার ডিপেনডেবলের ব্যাট থেকে।

তালিকার ছয়ে রয়েছেন ‍দুর্দান্ত ঢাকার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৩১০ রান করা নাঈম অর্ধশতক করেছেন দুইটি। ১১৯ এর ওপরে স্ট্রাইক রেট এবং ২৫ দশমিক ৮৩ গড়ে তিনি এই রান তুলেছেন। এরপরই রয়েছেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। ২৯৬ রান করা বিজয়ের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি অপরাজিত ৬৭। ৩২ দশমিক ৮৮ গড়ে ব্যাট করা বিজয় তিনবার পঞ্চাষার্ধ ইনিংস খেলেছেন।

২৪ দশমিক ৩৩ গড়ে এবং ১২৬ দশমিক ৯৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা কুমিল্লার লিটন দাস ২৯২ রান করে তালিকার আটে রয়েছেন। দুই অর্ধশতক পাওয়া লিটনের সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৫। তালিকার নবম স্থানে থাকা খুলনার আফিফ হোসেনের রান সংখ্যা ২৭৮। তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ৫২। আর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ১০ম স্থানে থাকা চট্টগ্রামের ব্রুসের রান ২৬১। সর্বোচ্চ ৫১ রানে অপরাজিত থাকা ব্রুস দুইবার অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন।

ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলিংয়েও দ্রুতি ছড়িয়েছেন দেশি ক্রিকেটাররা। সেরা ১০ উইকেট শিকারির নয়জনই বাংলাদেশি।

এই তালিকায় ২২ উইকেট নিয়ে সবার চেয়ে অনেক ওপরে রয়েছেন টাইগার পেসার শরীফুল ইসলাম। ৭ দশমিক ৮১ ইকোনমিতে এবং ১৫ দশমিক ৮৬ গড়ে তিনি এই উইকেট শিকার করেছেন। তার বেস্ট ফিগার ২৪ রানে ৪ উইকেট। শরীফুল ইসলামকে অভাগা বলা যেতেই পারে, এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পরও তার দল ঢাকা তালিকার তলানিতে থেকে আসর শেষ করেছে। পাশাপাশি টানা ১১ ম্যাচ হেরে লজ্জার রেকর্ডও করেছে ঢাকা।

১৭ ‍উইকেট নিয়ে তালিকার দুইয়ে টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ৬ দশমিক ২৩ ইকোনমিতে ১১ ইনিংসে তিনি এই উইকেট শিকার করেন। রংপুর রাইডার্সের এই অলরাউন্ডারের সেরা বোলিং ১৬ রানে ৩ উইকেট। তিনে রয়েছেন সাকিবেরই টিমমেট শেখ মেহেদী হাসান। ৬ দশমিক ৯৯ ইকোনমিতে তিনি ১৫ জন ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন।

সেরা দশে জায়গা করে নেয়া একমাত্র বিদেশি বোলার বিলাল খান রয়েছেন তালিকার চারে। চট্টগ্রামের হয়ে খেলা এই বোলার ১২ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ১২ উইকেট। তালিকার পাঁচে থাকা রংপুরের পেসার হাসান মাহমুদের উইকেট ১৩টি। ছয়ে থাকা টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদেরও উইকেট ১৩টি। তিনি দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে এবার বিপিএল খেলেছেন।

৭ দশমিক ৪৪ ইকোনমিতে ১২ উইকেট নিয়ে তালিকার সাতে আছেন কুমিল্লার স্পিনার তানভির ইসলাম। ১১ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া তানভিরের সেরা বোলিং ১৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট। তালিকায় এরপরই রয়েছেন কুমিল্লার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ৯ ম্যাচে মোস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা ১১টি। তবে তিনি ছিলেন বেশিই খরুচে। ৯ দশমিক ৫৬ ইকোনমিতে চলতি আসরে বল করেছেন মোস্তাফিজ। নয় ম্যাচে ১১ উইকেট পাওয়া সিলেটের বোলার তানজিম হাসান সাকিব আছেন তালিকার নয়ে। আর ১১ ম্যাচে সমান উইকেট নিয়ে এই তালিকার দশ নম্বরে রয়েছেন চট্টগ্রামের পেসার শহিদুল ইসলাম।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply