‘প্রথমবার নারী আম্পায়ার প্রিমিয়ার লিগে দিলাম, সে অফিসিয়ালি আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেলের আম্পায়ার। এটি গ্রহণযোগ্য না হলে তো আমরা বৈষম্য করছি। তারা অভিযোগ করেছিল যে, খেলবে না। পরে তারা এটি মেনে নিয়েছে।’ বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুর এমন একটি বক্তব্যের পরই বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নারী আম্পায়ার দেয়ায় খেলতে চাননি মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা।
বৃহস্পতিবার মিরপুরে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও মোহামেডানের যে ম্যাচ হয়েছিল, সেখানে ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। প্রিমিয়ার লিগে অনফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে সেটি ছিল তার প্রথম ম্যাচ। নারী বলেই সেই আম্পায়ারকে মানতে নারাজ ছিলেন মুশফিক-রিয়াদরা, এমন খবর ছড়ায়। যেখানে দাবি করা হয়, আম্পায়ার ইস্যুতে দেরিতে শুরু হয়েছিল ম্যাচ। আসলে কী ঘটেছিল? সত্যি কোনো অভিযোগ কি দেয়া হয়েছিল জেসির বিরুদ্ধে?
জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো অভিযোগই করেনি কোনো ক্লাব। ম্যাচও শুরু হয়েছিল ঠিক সময়ে। তাহলে নারী আম্পায়ার বিষয়টি কতটুকু সত্য?
জানা গেছে, জেসি নিজে মাঠে থেকেও এমন অপ্রত্যাশিত কিছু দেখতে বা শুনতে পাননি। এমনকি সুষ্ঠুভাবে পুরো ম্যাচ শেষ করায় জেসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় মোহামেডান ক্লাব। এখন প্রশ্ন, যেখানে আম্পায়ার জেসি নিজে কোনো অভিযোগ করেননি, সেখানে কার আগ্রহে ম্যাচের একদিন পর এমন একটি বিতর্ক উসকে দেয়া হলো? প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারিং মান নিয়ে যখন নানা সমালোচনা, তখন নারী আম্পায়ারিং ইস্যু কি তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত ব্যাপার?
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মোহামেডানের ক্রিকেট সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম টিটুর সাথে। বিতর্কের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কোনো লিখিতও কিছু দেইনি। আমাদের লক্ষ্য, ম্যাচ জেতা। কে আম্পায়ার, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।
জানা গেছে, মোহামেডান কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন মোহামেডানের সমন্বয়ক টিটু। তবে তা নারী আম্পায়ার না; কথা হয়েছিল ‘অভিজ্ঞতা’ ছাড়া বড় ম্যাচে জেসির আম্পায়ারিং নিয়ে। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।
বিবৃতিতে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব জানায়, কিছু গণমাধ্যমে ‘নারী আম্পায়ারের অধীনে ক্রিকেট খেলতে আপত্তি’ শীর্ষক সংবাদে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের নাম জড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্লাবটি প্রগতিতে বিশ্বাসী এবং সব লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মাঝে মাঝে ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ারদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খেলোয়াড়রা মাঠেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যা খেলারই অংশ। প্রকাশিত খবরে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব কোনও নির্দিষ্ট আম্পায়ারের অধীনে ম্যাচ খেলতে চায়নি বলে যে অভিযোগ, সেটি একেবারেই ভিত্তিহীন।
বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন এ নিয়ে মুখ খুলেছেন আম্পায়ার্স কমিটির সভাপতি মিঠুও। তিনি যমুনাকে বলেন, মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক দু’দলের ম্যানেজারেরই জানিয়েছিল, কেন গুরুত্বপূর্ণ এমন ম্যাচে অনভিজ্ঞ (তাদের ভাষায়) আম্পায়ার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে নারী-পুরুষের কোনো বিষয় ছিল না। তবে, জেসি মোটামুটি অভিজ্ঞই। ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন করে ইমার্জিং এশিয়া কাপ, ভারতে সিনিয়র খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও অস্ট্রেলিয়ায় আম্পায়ারিং করার পরই তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু নারী হওয়ায় জেসিকে নিয়ে কোনো খেলোয়াড় কিছু বলেছে বলে অভিযোগ নেই।
বিতর্কের বিষয়ে সাভারে একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে। এ নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, এমন কিছু হয়েছে কিনা, তিনি জানেন না। রোববারও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মিঠুর সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এমন কোনো কিছুই তাকে জানানো হয়নি।
Leave a reply