হোসেলুর হাত ধরে আরেকটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

|

ছবি: সংগৃহীত

ঘরের মাঠে বায়ার্নকে রীতিমতো উড়িয়ে দিবে এমনটাই ভাবছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা। তবে ইউরোপিয়ান ক্ল্যাসিকো’তে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্র’য়ে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে পুরো সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে আলফনসো ডেভিসের গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। মাঠটি যখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু তখন প্রত্যাবর্তনের গল্প হবে না এমনটি হয় নাকি! ৩ মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে তুললেন হোসেলু।

বুধবার (৮ মে) নিজেদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বায়ার্ন মিউনিখকে আতিথ্য জানায় রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় প্রথম লেগ ২-২ ড্র হয়েছিল। তাই ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে দুই দলেরই সমান সুযোগ ছিল। এমন সমীকরণের ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ।

ম্যাচের ৬ষ্ঠ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি পায় লস ব্লাঙ্কোসরা; তবে দানি কারভাহালের গোলমুখে বাড়ানো বলে প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি রদ্রিগো। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে অন্যপাশে ভীতি ছড়ায় বায়ার্ন, তবে নাব্রির দূরের পোস্টে বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি হ্যারি কেইন।

ম্যাচের ১৩তম মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে দু’বার হতাশায় পুড়তে হয় রিয়ালকে। প্রথমবার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্ট এড়াতে পারেনি। ফিরতি বল ছয় গজ বক্সে পেয়ে শট নেন রদ্রিগো, এবার দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। প্রতিপক্ষের প্রবল চাপে সেভাবে আক্রমণেই উঠতে পারছিল না বায়ার্ন। প্রথম ২০ মিনিটে রিয়াল যেখানে গোলের জন্য চারটি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখে, সেখানে বায়ার্ন এই সময়ে পারেনি কোনো শট নিতেই। 

ম্যাচের ২৮তম মিনিটে প্রথম শটেই গোল পেতে পারতো বাভারিয়ানরা। বক্সের বাইরে থেকে জোরালো নিচু ভলি করেন হ্যারি কেইন, ঝাঁপিয়ে এক হাত দিয়ে বল বাইরে পাঠান আন্দ্রি লুনিন। এর মিনিট ১২ পরে আবারও নয়্যারের নৈপুণ্যে বেঁচে যায় বায়ার্ন। বক্সের বাঁ দিক থেকে ভিনিসিয়াসের বাঁকানো শটে বল সবাইকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যেই ছিল, শেষমুহূর্তে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক। ফলে গোলশূন্য ড্র নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতির পর মুহূর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকে স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে রদ্রিগোর রক্ষণপ্রাচীরের ওপর দিয়ে নেয়া ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক। পরের মিনিটে তিনি ভিনিসিয়াসের জোরালো শট অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন। ৬৬তম মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে বায়ার্ন। বক্সে কারভাহালকে কাটিয়ে জোরালো শট নেন জামাল মুসিয়ালা, দারুণ নৈপুণ্যে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন লুনিন।

অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতেই ৬৮ মিনিটে গোল পেয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। কেইনের নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা করে বাড়ানো বল ডেভিসের চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রিয়াল বক্সে ঢুকে দূরের কোণা দিয়ে জালে জড়ান। ঝাঁপিয়ে পড়লেও কিছুই করার ছিল না লুনিনের। পিছিয়ে পড়ার পরপরই একসঙ্গে দু’টি পরিবর্তন করেন রিয়াল কোচ; টনি ক্রুসের বদলি লুকা মদ্রিচ এবং অহেলিয়া শুয়ামেনির জায়গায় এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে নামান।

ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া হোসেলু মাঠে নামেন ৮১ মিনিটে, ফেদে ভালভের্দের বদলি হিসেবে। ৮৮ মিনিটে রিয়ালকে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই মুহূর্তই এনে দেন হোসেলু। ভিনিসিয়াসের শট সোজাসুজি হাতেই পেয়েছিলেন বায়ার্ন গোলকিপার নয়্যার। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত চারটি গোলের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেয়া নয়্যার এ দফায় বল হাত ফসকে ফেলেন। সুযোগসন্ধানী হোসেলু খুব কাছে থাকায় বল জালে জড়াতে একদমই ভুল করেননি।

পরের গোলটি আসে ৯১তম মিনিটে। তাও নাটকীয়ভাবে। নাচোর কাছ থেকে পাওয়া বল আন্টনি রুডিগার বাড়ান হোসেলুর দিকে, যিনি বল জালে জড়িয়ে উল্লাস শুরু করতে না করতেই অফসাইডের পতাকা তোলেন রেফারি। তবে ভিএআর চেকে দেখা যায় রুডিগার-হোসেলু দুজনই অনসাইডে ছিলেন। পুরো রিয়াল মাদ্রিদ ডাগআউট গোলের আনন্দে মাঠে ঢুকে পড়ে। হোসেলু হয়ে ওঠেন উৎসবের মধ্যমণি।

এরপরও বায়ার্নের ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সময় অবশ্য ছিল, যোগ করা সময় ৯ মিনিট দিলেও নানা বিঘ্নতায় শেষ পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটায় ১৫ মিনিটে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু বায়ার্ন আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রেকর্ড ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী ১ জুন লন্ডনের ওয়েম্বলিতে হবে ফাইনাল।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply