হাথুরুর চোখে ‘ওরা ১৫ জন’

|

আগামী ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিযান। বিশ্বকাপে অংশ নিতে এবং আসরের সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে দেশটিতে অবস্থান করছেন সাকিব-রিয়াদ-শান্তরা। বাংলাদেশের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের অধীনে সবমিলিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছে টাইগাররা।

তাই দলের শক্তি সামর্থ্যের বিষয়ে জানাশোনাটাও তার বেশি। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড কেমন হলো, দলে থাকা খেলোয়াড়দের শক্তি-সামর্থ্যের জায়গা কোথায়- এসব নিয়ে কথা বলেছেন এই লঙ্কান মাস্টার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে হাথুরুর সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে। প্রধান কোচের চোখে বিশ্বকাপ দলের খেলোয়াড়রা কেমন, সেটিই ‍তুলে ধরা হলো-

নাজমুল হোসেন (শান্ত)

শান্ত আমাদের অধিনায়ক। সে খুবই ভালো নেতা। কাজের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেয়, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। ড্রেসিংরুমে সবার সঙ্গে মেশে। মাঠে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সে। এবারের বিশ্বকাপে ওর ওপর বড় দায়িত্ব। প্রথমবার বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জটা সামলাতে হবে শান্তকে।

তাসকিন আহমেদ

তাসকিন মানুষ হিসেবে খুবই আবেগপ্রবণ। সে যখন ভালো মুডে থাকে, আমরা ওর সেরাটা পাই। পেসারদের মধ্যে ও কোচিং স্টাফদের মধ্যে সে খুবই জনপ্রিয়। সব সময়ই দলের জন্য সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে, উন্নতি করার চেষ্টা করে। দলের মধ্যে গ্রেট ক্যারেক্টার তাসকিন।

লিটন দাস

লিটন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এবারের বিশ্বকাপে ওর কাছে বড় কিছু আশা করছি। খুবই প্রতিভাবান এবং প্রকৃতিপ্রদত্ত অ্যাথলেট। লিটন কিপিং পারে, ফিল্ডিং করতে পারে। দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। যে কোনো পজিশনে বা আউটফিল্ডে ভালো ফিল্ডিং করে। তার খেলা বিশ্বমানের। লিটন মাঠের বাইরে চুপচাপ থাকে। তবে খেলাটা সে ভালো বোঝে। অন্যদের ট্যাকটিক্যালি সহায়তাও করে।

সাকিব আল হাসান

সাকিব আমাদের কিংবদন্তি। আমরা সবাই জানি, সে সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে। আমি আশা করি এবারেরটি তার সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ হবে। সে তিনভাবেই দলকে সহায়তা করতে পারবে। সাকিব খুব ভালো নেতাও। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো মিশতে পারে। সবার কাছ থেকে সম্মানও আদায় করতে পারে। আর মাঠের মধ্যে খেলাটাও খুব ভালো বোঝে।

মাহমুদউল্লাহ

সম্ভবত সে আমাদের স্পিরিট অব দ্য টিম। ওর উপস্থিতি দলের মধ্যে, ড্রেসিংরুমে একধরনের স্থিরতা নিয়ে আসে। যখন সে কথা বলে, সবাই শোনে। সাম্প্রতিক সময়ে ওর ব্যাটিংও অন্য উচ্চতায় উঠেছে। যখন ব্যাটিং করে, নির্ভয়ে করে। আমার মনে হয়, সে দলের জন্য ভালো। চাপের পরিস্থিতি ভালো সামাল দিতে পারে, যেটা আশপাশে থাকা তরুণদেরও কাজে দেয়।

সৌম্য সরকার

প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড়। আমার মনে হয়, সে এখন পর্যন্ত নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে আমরা ওর সেরা ক্রিকেটের ঝলক দেখেছি শুধু। তিন মাধ্যমেই দলে অবদান রাখতে পারে। সৌম্য খুব ভালো ফিল্ডার। নিজের সেরা অবস্থায় সে একজন ম্যাচ উইনার। আশা করি, এবার সে আমাদের কয়েকটি ম্যাচ জেতাবে।

তানজিদ হাসান

তামিমকে নিয়ে খুব রোমাঞ্চিত। আমার মনে হয়, একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সামনে বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। তার খেলার জন্য অনেক সময় আছে। যখন সে ব্যাটিং করে, এটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, মনে হয় অন্যদের চেয়ে তার হাতে সময় অনেক বেশি। তরুণ এবং রোমাঞ্চকর ব্যাটসম্যান। ফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত।

তাওহীদ হৃদয়

রোমাঞ্চকর এক তরুণ খেলোয়াড়। সাধারণ স্টেরিওটাইপ ক্রিকেটের চেয়ে তার ধরন আলাদা। সে খুব প্রতিভাবান, উদ্ভাবনীতে খুব পটু। হৃদয়ের সবকিছুই খুব গতিময়। ওর অনুভূতি, হাঁটাচলা, কথা বলা; সবকিছুই গতিময়। আমার মনে হয়, খুব প্রতিভাবান একজন টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়।

জাকের আলী অনীক

জাকের দলে নতুন মুখ। ওকে যতটুকু দেখেছি, তা থেকে বলতে পারি, ওর মধ্যে শান্ত একটা ভাব আছে। ওর ব্যাটিং ধৈর্যশীল। সত্যিকার অর্থেই সে যখন চাপের মুখে থাকে, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখে। বৈচিত্র্যময় প্রতিভা, সে কিপিং করতে পারে, ফিল্ডিং করতে পারে আর অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করে। আমি মনে করি, এই বিশ্বকাপের বিস্ময় হতে পারে জাকের।

তানভীর ইসলাম

সত্যিকার অর্থেই তানভীর আমাদের দলে অনন্য এক দক্ষতা যোগ করেছে। পাওয়ারপ্লেতে সে নতুন বলে বল করতে পারে। ঘরোয়া ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট বিপিএল, ডিপিএলে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে যে, সে এই পর্যায়ের (জাতীয় দল) ক্রিকেটটাও সামলাতে পারবে। আমি আগেও যেমনটা বলেছি, যদি সে দলে থাকে, তাহলে অনন্য এক ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা তাকে পাওয়ার প্লে’র শক্তি হিসেবে ভাবছি।

শেখ মেহেদী হাসান

শেখ মেহেদীও একজন বৈচিত্র্যময় খেলোয়াড়। একজন অলরাউন্ডার। তার মূল দক্ষতা বোলিংয়ে। চাপের মুখে নতুন বলে খুব ভালো বোলার সে। আমার মনে হয়, যেকোনো পরিস্থিতির চেয়ে সে চাপের মুখেই বেশি ভালো করে। ড্রেসিং রুমে সে সবার সাথে সহজেই মিশতে পারে। সবার সঙ্গে মজাও করে। মাঠে নামলে নিজের সর্বস্ব দেয় দলের জন্য।

রিশাদ হোসেন

রিশাদ যেভাবে নিজেকে খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলেছে, সেটা দেখে আমি সত্যি খুব রোমাঞ্চিত। আমি যখন প্রথম তাকে দেখি, তখন সে প্রথাগত লেগ স্পিনার ছিল না। সে খুব লম্বা, খুব অ্যাথলেটিক, দুর্দান্ত ফিল্ডার। আসলে সে দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। সে দ্রুত শিখতে পারে। আমি জানি না, তার মাথায় কী চিন্তা খেলা করে। তবে চাপের মুখে সে খুব শান্ত থাকে। কখনো কখনো সে ব্যাট হাতেও দারুণ কিছু উপহার দেয়। আমি তাকে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক দেখতে চাই।

মোস্তাফিজুর রহমান

ফিজকে নিয়ে আমি আর কী বলতে পারি? ফিজ অনন্য এক জাত। আমি তো মনে করি, আমাদের এবং বিশ্ব ক্রিকেটেই বিরল এক প্রতিভা ফিজ। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা অসাধারণ। বাহু আর কবজি দিয়ে সে যা করে যাচ্ছে, এটা অনেক বোলারই করতে পারে না। সে তার সেরা ছন্দে আছে। নিজের খেলা নিয়ে তার কোনো অস্বস্তি নেই। এখন তো সে খুব আত্মবিশ্বাসীও। আমরা যখন টিম মিটিংয়ে কথা বলি, সে–ও কথা বলে। সে খুব মজার মানুষও। আমি ঠিক বুঝতে পারি না, সে কী বলে। তবে দেখেছি, তার সঙ্গ সবাই উপভোগ করে। কখনো কখনো সে এমন কিছু বলে যে, দলের সবাই খুব হাসে।

শরিফুল ইসলাম

৬ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। সে খুব গতিতে বল করতে পারে, খুব প্রতিভাবান। দলের খুব অভিজ্ঞ এক শক্তি সে। শরিফুল শুধু একটা বিষয়ই জানে, সেটা উইকেট নিতে। সে খুবই কর্মমুখী। তাকে তো কখনো কখনো গোল্ডফিশের মতো লাগে। সবকিছু খুব দ্রুত ভুলে যায়। তাকে সবসময় আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। খুবই ভালো একজন ফিল্ডার। সে ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। আমার মনে হয়, ব্যাট হাতে সে কতটা কী করতে পারে, নিজেও ঠিকভাবে জানে না।

তানজিম হাসান সাকিব:

ওর প্রতিজ্ঞাই মূল বিষয়। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ। চ্যালেঞ্জকে কখনো ভয় পায় না। মাঠে নামলে নিজের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করার পাশাপাশি দলকে সাহায্য করে যায়। যখন সে না খেলে তখনও একজন ভালো টিমমেট। তাকে বড় হৃদয়ের অধিকারী বলতে পারেন।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply