ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের ঘোষণার পরই লাপাত্তা আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরা। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উধ্বর্তন কর্তারাও। সবমিলিয়ে সরকার পতনের কারণে বিসিবির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা গিয়েছে।
দেশে সহিংস পরিস্থিতির কারণে গত কয়েক দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট ছিল ঘরবন্দী। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফরও পিছিয়ে যায় এতে। তবে ‘এ’ দলের পাকিস্তান সিরিজটি পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী মাঠে গড়াবে ধরে নিয়েই আজ (৭ আগস্ট) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ‘এ’ দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলনে ফিরেছেন।
আজ সকালে বিসিবির কোচ মিজানুর রহমানের অধীনে ব্যাট-বলের অনুশীলনের আগে ক্রিকেটাররা গত এক মাসে সহিংস পরিস্থিতির কারণে সারা দেশে মারা যাওয়া প্রত্যেকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ, মাহমুদুল হাসান, জাকির হাসানসহ টেস্ট দলের আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ক্লাব কর্মকর্তা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক দুই অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং হাবিবুল বাশার সুমন।
সংবাদমাধ্যমকে নান্নু বলেন, এখন সবার সহযোগিতা নিয়ে আমাদের ক্রিকেটটাকে চলমান রাখতে হবে। এখন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আছে, এ টিমের সফর আছে, সামনে টেস্ট সিরিজ আছে। এগুলো যাতে সময়মতো হয় সেটার জন্য সবার সহযোগিতা আমাদের দরকার।
জাতীয় দলের সাব্কে এই প্রধান নির্বাচক আরও বলেন, এখানে সুন্দরভাবে সবার সহযোগিতা নিয়ে ক্রিকেটটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। এখানে কোনো দ্বিমত নাই কারোর। আমাদের সবার সহযোগিতার দরকার, আমরা ক্রিকেটটাকে এগিয়ে নেব এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা চাই যে সুশাসনের, সুন্দরভাবে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিতে পারি। এবং ভালোমতো মাথা উঁচু করে যাতে সমাজে দাঁড়াতে পারি সবাই চাচ্ছে এটা।
সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, আমার মনে হয় সম্ভব, দ্রুত এটা কেটে যাবে আমার বিশ্বাস। আমাদের সবকিছু তো ইন অর্ডার আছে। প্র্যাক্টিস আবার শুরু হয়ে যাবে। আমি আশাবাদী যে আমাদের যে প্রোগ্রামগুলো ছিল সেগুলো আবার ঠিক মত হবে। কারণ আমাদের সামনে গুরুরত্বপূর্ণ খেলা আছে, বিশ্বকাপ আছে আমাদের ট্যুর আছে। আশা করছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে, ২০০৮ সাল থেকে টানা শাসন ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগের পতন হয়। আওয়ামী লীগের পতনে ক্ষমতার পালাবদলের গুঞ্জন উঠেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যত নিয়েও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের জোর আওয়াজ উঠেছে। ক্রিকেট বোর্ডে দীর্ঘদিন ধরে বসে থাকা সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বিষয়ে কী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? কিংবা কোনো পরিবর্তন আনা হবে কি না- এ নিয়ে অনেক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হলো, চাইলেই বিসিবিতে হুট করে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। কারণ, বিসিবি সংস্থার ওপর সরকার নয়, খবরদারি করার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট খেলার আন্তর্জাতিক সংস্থার।
শ্রীলঙ্কা গত বছর সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী আদালতের মাধ্যমে দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) নির্বাচিত কমিটিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। পরে আদালতের রায় বাতিল করে পুনরায় নির্বাচিত কমিটিকে দায়িত্বে ফিরিয়ে এনে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছিল দেশটি।
বাংলাদেশেও চাইলে হুট করে নির্বাচিত কমিটি সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সদ্য বিলুপ্ত মন্ত্রিসভার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে তারও মন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচিত কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি এখনও বিসিবির শীর্ষ দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে, পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুটি চার দিনের ম্যাচ ও তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলার কথা। কিন্তু দেশের পরিস্থিতির কারণে সফরটি পিছিয়ে যায়। মুশফিকদের পাকিস্তান যাওয়ার সম্ভাব্য সূচি ৯ আগস্ট।
এতে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। আগের সূচি অনুযায়ী ১০ আগস্ট প্রথম চার দিনের ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা, ১৮ আগস্ট দ্বিতীয়টি। এরপর ২৩, ২৫ ও ২৭ আগস্ট তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলার কথা দুই দলের। বাংলাদেশ সময়মতো যেতে না পারায় নতুন করে সফরসূচি সাজাতে হচ্ছে।
এছাড়াও, চলতি বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের মাটিতে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি)।
অক্টোবরে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ৩ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা ও সিলেটে আসরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ১০ দলের অংশগ্রহণের এই আসরের দুই মাস আগে বাংলাদেশে এমন অবস্থা তৈরি হওয়ায় বিকল্প ভেন্যু নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে আইসিসিকে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া তিনটি দেশের সরকার ইতোমধ্যে তাদের দেশের নাগরিকদের এই দেশে সফরের ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
আইসিসি বেশ কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিল তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এবার জানা গেছে তারা সম্ভাব্য সব বিকল্পও ভেবে রেখেছে। বিশেষ করে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নিরাপত্তা আইসিসির কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে। এ কারণেই তারা বিকল্পের কথাও চিন্তা করছে।
এদিকে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। যার কারণে সংসদ সদস্যের পদ হারিয়েছেন সাকিব। এমন পরিস্থিতিতে টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক দেশে ফিরবেন কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। তবে সাকিবের দেশে ফেরার বিষয়ে বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেছেন শাহরিয়ার নাফীস। তিনি বলেন, টিমে সিলেক্ট হলে স্বাভাবিকভাবেই সাকিব বাংলাদেশে এসে দলের সঙ্গে পাকিস্তানে যাবেন। কিন্তু অনেক সময় ব্যক্তিগত কারণে ক্রিকেটাররা নিজেরা ট্রাভেল করেন, ক্রিকেট বোর্ড সেই সুযোগ দেয়।
/আরআইএম
Leave a reply