অর্থনীতি: নানা চাপের মধ্যেই নতুন বছর শুরু, সংস্কার জোরালো করার তাগিদ

|

রিমন রহমান:

শেষ হলো ঘটনাবহুল একটি বছর, ২০২৪। আর্থিক কিংবা রাজনৈতিক, সবক্ষেত্রেই ছিল আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা। রাজনীতির মতো অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বলা যায়, ওলট-পালটের বছর। সূচকের অবনমন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন, ব্যাংক খাতের লুটপাটসহ নানা ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যত্যয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেরিয়ে এসেছে আর্থিক খাতের গা শিউরে ওঠা অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত।

অর্থনীতির এই চাপকে সঙ্গী করে শুরু হলো নতুন বছর। প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৫ সালেও কি স্বস্তি মিলবে? চ্যালেঞ্জ অনেক। তবে সংস্কার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে নতুন করে পথ চলার এটাই উপযুক্ত সময়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে তো মুদ্রাস্ফীতিকে স্বীকারই করতো না। অন্তর্বর্তী সরকার তো মুদ্রাস্ফীতির বাস্তবতা স্বীকার করছেন, তা আছে। কিন্তু এই স্বীকারটা এখানে থেমে রাখলে হবে না। নীতির কোথায় কোথায় হাত দেয়া যায় তা করতে হবে, যেমন একটা হচ্ছে উৎপাদন বাড়ানো, এটা অন্যতম। কিন্তু এখানে আমি আমলাতান্ত্রিক গতিহীনতা দেখছি।

এদিকে, নানা অনিশ্চয়তায় থমকে গেছে বিনিয়োগ। কমেছে মোট দেশজ উৎপাদন বা প্রবৃদ্ধি। সরকারের সঙ্গে জিডিপির হার কমিয়ে প্রক্ষেপন করেছে ঋণদাতা একাধিক সংস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে নতুন বছরে কি কাটবে বিনিয়োগ খড়া?

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টার মতে, অর্থনীতির চাকাকে আরও জোরালোভাবে ঘুরাতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। দেশ, জাতির মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগী মনোভাব টকবক করছে। টকবক করা তো প্রথম শর্ত, সামষ্টিক অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় আছে। সেখান থেকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেগুলো তো একটা আছে বটেই। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেই আমাদেরকে কিন্তু আরও উপরের দিকে ওঠার কাজটা করতে হবে।

ব্যাংক খাতে বছরজুড়েই ছিল দুর্দশা। রেকর্ড গড়েছে খেলাপি ঋণ। পরিবর্তিত অবস্থায় ভেঙে দেয়া হয়েছে একাধিক ব্যাংকের পর্ষদ। বিতর্ক থাকলেও দুর্বল ব্যাংকগুলো বাঁচাতে টাকা ছাপিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন বছরে কি ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংক খাত?

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বললেন, যে কাজগুলোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আইনগুলো যদি হয়ে যায়, আর ঠিকমতো শেষ করা গেলে এবং সেখান থেকে বিশ্বাসযোগ্য ফাইন্ডিংস আসে, এর ভিত্তিতে দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে কোনো না কোনো একটা নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে। তাহলে ব্যাংকিংয়ে স্বাস্থ্যটা ভালোর দিকে যাবে।

শেখ হাসিনা সরকারের এক দশকে আর্থিক খাতে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। অর্থনীতির শক্ত ভিত্তি ক্রমান্বয়ে হয়েছে দুর্বল। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে তৈরি করা অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে নানা অসঙ্গতি। সংকট কাটাতে নতুন বছরে দরকার সংস্কার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন।

ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, এখন ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট ঘাটতি, আগামীতেও ও রকমই বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ৩ লাখ কোটি টাকা হতে পারে বলে শুনতে পাচ্ছি। তাহলে তো আবার বাজেট থেকে টাকা তুলতে হবে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য। সেই ক্ষেত্রে তো ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহের ওপর একটা চাপ পড়বে। কাজেই এখানে বিভিন্ন ধরনের ট্রেড অপস আছে, ওইটা কীভাবে ম্যানেজড হয়, সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

বিদায়ী বছরে সুখবর কেবল ধারাবাহিক কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করেছে খাদ্য নিরাপত্তা। চব্বিশে অর্থনীতির জন্য স্বস্তি এনেছে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply