তোয়াহা ফারুক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে। হলে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে। মেধাবী, জনপ্রিয়, ইমেজ ভালো এমন ছাত্রলীগ নেতাদের ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এজন্য, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি চালানো হবে গোপন জরিপও। রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে।
এখনও গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, তাই অগোছালো ছাত্রলীগকে দেখভাল করতে আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই চার নেতা হলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান। রোববার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তিন জন। ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান দেশের বাইরে থাকায় বৈঠকে থাকতে পারেননি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছাত্রলীগের দুই প্রতিনিধিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বার্তা জানিয়ে দেন। বলেন, দলীয় সভানেত্রী চান, সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে ডাকসু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। ছাত্রলীগকে নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড শুরু করার নির্দেশ দেন তারা।
মেধাবী, জনপ্রিয়, ভালো ইমেজের ছাত্র নেতাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার কথা উঠে আসে বৈঠকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশের শিক্ষার্থী নারী- এ বিবেচনায় নারী প্রার্থীদের বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানান বৈঠকে উপস্থিত একজন আওয়ামী লীগ নেতা। বিবেচনায় নেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যারিয়ার, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, কোন হলে কী অবস্থা, সেটি নির্ণয় করে হলে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তাদের তালিকা ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়েছে। এদের মধ্যে কারা কারা সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপন তথ্যভিত্তিক জরিপ চালানোর বিষয়টি স্বীকার করে জনাব আব্দুর রহমান বলেন, নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, নেত্রী যাকে প্রার্থী করবেন আমরা সবাই তাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করবো। ছাত্রলীগের অনেকের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ও প্রতিহিংসা কাজ করছে না।
সর্বাত্মকভাবে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন উল্লেখ করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের নেত্রী এই নির্বাচনের ব্যাপারে খুব আন্তরিক ও সিরিয়াস এমন বার্তা পেয়েছি। তবে, মিটিংয়ে প্যানেল নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার আমরা ছেড়ে দিয়েছি দেশরত্ন শেখ হাসিনার ওপরে।
ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা জানান, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রীসহ সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গড়া ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানার সক্রিয় করার কথা ভাবছে ছাত্রলীগ। হল থেকে ভোট কেন্দ্র সরানোর যে দাবি করছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো সেটির বিরোধিতা করবে ছাত্রলীগ। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টির দিকেও বাড়তি নজর রাখছেন তারা।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply