বিশ্বকাপে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ চলাকালীন শনিবার হেডিংলি স্টেডিয়ামের আকাশে ছোট বিমান উড়িয়ে যেভাবে কাশ্মীর নিয়ে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেই ঘটনায় আইসিসি-র কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
আইসিসি-ও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঘটনায় তারা ‘খুবই অসন্তুষ্ট’।
এক্ষেত্রে লিডসের স্থানীয় ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের পুলিশের ব্যর্থতাকেই তারা দায়ী করছে।
দিনকয়েক আগে বিশ্বকাপেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের সময় যেভাবে আকাশে বালোচিস্তান নিয়ে ব্যানার ওড়ানো হয়েছিল, অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেট-অনুরাগী আবার গতকালের ঘটনাকে তারই বদলা হিসেবে দেখছেন।
শনিবার হেডিংলিতে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শুরু হওয়ার একটু পরেই আকাশে একটি ছোট প্রাইভেট বিমানকে চক্কর কাটতে দেখা যায় – যার লেজের দিকে টাঙানো ব্যানারে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘কাশ্মীরের জন্য বিচার চাই’।
এই হেডিংলিতেই ঠিক এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের সময়ও আকাশে একই ধরনের ব্যানার চোখে পড়েছিল, তখন অবশ্য বিচার চাওয়া হয়েছিল বালোচিস্তানের নামে।
গতকাল মাঠে ছিলেন বিবিসির নীতিন শ্রীবাস্তব, তিনি বলছিলেন “এদিন কিন্তু বিমানটি মাঠে অন্তত তিন-চারবার ফিরে আসে। তার প্রথম রাজনৈতিক বার্তাটা ছিল জাস্টিস ফর কাশ্মীর।”
“এরপর দশ থেকে পনেরো ওভারের মাথায় আবার সেটিকে দেখা যায়, এবারের বার্তাটা ছিল, ‘ভারত গণহত্যা বন্ধ করো – কাশ্মীরকে স্বাধীন করতে হবে’।”
“ভারতের ব্যাটিংয়ের মাঝামাঝি চোখে পড়ে নতুন ব্যানার, ‘ভারতে মব লিঞ্চিং বন্ধ করতে সাহায্য করুন’। নন-স্ট্রাইকার এন্ড থেকে রোহিত শর্মাকেও সেই ব্যানার পড়তে দেখা যায়।”
“পরে সন্ধ্যায় আইসিসি তাদের বিবৃতিতে জানায় এই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে তারা খুবই হতাশ – এবং কোনও আইসিসি ইভেন্টে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ভারতেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয়েছে তীব্র।
এই ঘটনায় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে কি না, আকাশপথে এসে খেলার মাঝপথে বিমান থেকে হামলা চালানো হলে কী হত – এই জাতীয় প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছে অনেক ভারতীয় গণমাধ্যম।
এরপর আজ (রোববার) সকালে ঘোষণা করা হয়, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআই এই ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
প্রথমত, ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে।
তা ছাড়াও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এম এস ধোনি তার উইকেটকিপিং গ্লাভসে সেনাবাহিনীর বিশেষ চিহ্ন নিয়ে খেলায় আইসিসি সেটা তাকে খুলতে বাধ্য করেছিল – তাহলে এখানে কেন ব্যবস্থা নিতে এত দেরি হচ্ছে?
আইসিসি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচগুলোরে সময় স্টেডিয়ামের ওপর যাতে ‘নো-ফ্লাই জোন’ বলবৎ করা হয়, তারা এখন সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে।
কিন্তু যে লিডস শহরে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বহু লোকের বাস, সেখানে এই ঘটনার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
বিবিসির নীতিন শ্রীবাস্তব বলছিলেন, “তারা অনেকেই কিন্তু এ ঘটনাকে বিশেষ একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।”
“কেউ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন, কেউ মনে করছেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর অধিকার ব্রিটেনে অতি স্বাভাবিক ঘটনা, এটা নিয়ে এত হইচইয়ের কিছু নেই।”
পাকিস্তানের মুলতানে ইউটিউবার আসিম হামজা আবার বলছেন, “আমার কিন্তু এদিনের কাশ্মীর ব্যানার খুব পছন্দ হয়েছে!”
“কই, বালোচিস্তান নিয়ে যেদিন ব্যানার ওড়ানো হল সেদিন তো কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখিনি।”
“আর আমরা পাকিস্তানিরা কিছু করলেই সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায়!”, বলছেন তিনি।
ফলে হেডিংলির আকাশে মাত্র কয়েক চক্কর দিয়েই ওই ছোট্ট বিমান যে ক্রিকেট-যুদ্ধের মধ্যেই কূটনীতির তুফান তুলে দিতে পেরেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a reply