মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে ফ্রান্স

|

ছবি: সংগৃহীত

সেমিফাইনালে এসেই ইতি ঘটলো বিশ্বকাপে মরক্কোর স্বপ্নযাত্রার। ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যদের ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন দিদিয়ের দেশমের দল। থিও হার্নান্দেজ ও কোলো মুয়ানির লক্ষ্যভেদে মরোক্কান রূপকথায় ছেদ টানে ফ্রান্স। ব্রাজিলের পর টানা দুই বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এখন গ্রিজমান-জিরুরা। তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

বলের দখল যাদের কম থাকবে তারাই জিতে নেবে ম্যাচ, চলতই আসরে এই ধারা আরও একবার দেখা গেছে আল বাইত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও বলের দখল থেকে শুরু করে আক্রমণ, দুইদিকেই এগিয়ে ছিল মরক্কো। তবে মহামূল্যবান গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি আমরাবাত-হাকিমিদের। মরক্কোকে গোল বঞ্চিত করার জন্য গোললাইন ক্লিয়ারেন্সও করতে হয়েছে জুলস কুন্দেকে। সেই সাথে, দুই প্রান্ত থেকে আসা বেশ কয়েকটি আক্রমণ রুখতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে কোনাতে-ভারানেদের। সেই সাথে, ৫ মিনিটে থিও হার্নান্দেজের গোলের সাথে ম্যাচের শেষ দিকে ৭৯ মিনিটে কোলো মুয়ানির ট্যাপ ইনে করা দ্বিতীয় গোলে অনেকটাই জয় নিশ্চিত হয় ফ্রান্সের।

তবে, ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের পরিকল্পনা নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছুই ছিল। ফ্রান্সের বিপক্ষে অঘটনের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নামে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যরা। কিন্তু ম্যাচের ৫ মিনিটেই ডানপ্রান্ত থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকে বল বাড়ান আতোয়ান গ্রিজমান। তবে তার সামনে বেশ কয়েকজন ডিফেন্ডার থাকায় বল চলে যায় ডি বক্সের বাম পাশে অরক্ষিত থাকা থিও হার্নান্দেজের সামনে। অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে দুরূহ কোণ থেকে মরোক্কান গোলরক্ষক বোনোকে পরাস্ত করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন থিও হার্নান্দেজ।

পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে একের পর আক্রমণ রচনা করে মরক্কো। সেই সাথে, কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের দারুণ একটি সুযোগও পেয়েছিল ফ্রান্স। অরেলিয়া শুয়ামেনির শট গোললাইন থেকে প্রতিহত হলে ডি বক্সে ফাকায় দাঁড়ানো অলিভিয়ের জিরু চলতি বলেই নেন শট। ফাঁকা গোলপোস্ট মিস করে জিরুর সেই শট। এছাড়া আরেকটি আক্রমণ থেকে বাম পায়ের জোরালো শটে মরক্কোর গোলবার কাঁপিয়ে দেন চলতি আসরে ৪ গোল করা জিরু।

তবে ম্যাচে ফিরে আসার উপলক্ষ্য আরও একবার সৃষ্টি করেছিল মরক্কো। কিন্তু প্রথমার্ধের অন্তিম সময়ে ফ্রান্সের ডি বক্সে যাওয়াদ এল ইয়ামিকের বাইসাইকেল কিক ডানপাশে ঝাঁপিয়ে গোলবারের সহায়তায় রক্ষা করেন হুগো লরিস। প্রথমার্ধের শেষ কয়েক মিনিতে ফরাসি রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছিল মরক্কো। একের পর এক আক্রমণে হুগো লরিসদের প্রাণপণে রক্ষণ সামলাতে বাধ্য করেও গোলের দেখা পায়নি হাকিম জিয়েচরা।

আর তার ধারাবাহিকতা দেখা যায় দ্বিতীয়ার্ধেও। বরং, আক্রমণের গতি আরও বাড়িয়ে দেয় মরক্কো।হাকিম জিয়েচ, বুফাল, ঔনাহিদের একের পর আক্রমণ রুখতেই ব্যস্ত চিল ফরাসি ডিফেন্স। সেই সাথে, সুইপার পজিশন থেকে বলের জোগান দিয়ে গেছেন গ্রিজমান। আর পাল্টা আক্রমণে গতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে গেছেন এমবাপ্পে-ডেম্বেলেরা। আর তেমন এক আক্রমণ থেকেই দ্বিতীয় গোল পায় ফ্রান্স। ডি বক্সে এমবাপ্পের শট মরোক্কান ডিফেন্সে প্রতিহত হয়ে ডান প্রান্তে অরক্ষিত কোলো মুয়ানির সামনে আসলে সহজ ট্যাপ ইনে দলের জয় নিশ্চিত করেন বদলি হিসেবে নামা এই ফরোয়ার্ড। মাঠে নেমে প্রথম ছোঁয়াতেই বিশ্বকাপ গোল পেয়ে যান কোলো মুয়ানি।

কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এসে প্রথমবারের মতো পিছিয়ে পড়েছিল মরক্কো। প্রথমবারের মতো দুই গোল হজমও করতে হয়েছে রেগ্রাগুই শিষ্যদের। আর, অপরাজিত এই স্বপ্নযাত্রার শেষটাও হলো ফ্রান্সের সাথে। এবার স্বপ্নের ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে দিদিয়ের দেশমের দল। টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ফরাসিদের ভরসা হিসেবে কাজ করতে পারে দলটির ডিফেন্স। মরক্কোর বিপক্ষে রক্ষণ সামলে দারুণ প্রস্তুতিও হয়েছে তাদের। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে সামলে রাখার জন্য এই প্রস্তুতি কাজে লাগতে পারে গ্রিজমানদের।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply