ছাপাখানার বর্জ্যে সয়লাব আরামবাগ-ফকিরাপুল

|

ছাপাখানার উচ্ছিষ্ট বর্জ্যে সয়লাব হয়ে পড়েছে আরামবাগ-ফকিরাপুলের প্রতিটি রাস্তা ও গলিপথ।

এসব উচ্ছিষ্টের মধ্যে কাগজ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে পুরনো ভাঙা প্লেট, প্যাকিংয়ের দড়ি, কালির কৌটা, নষ্ট হয়ে যাওয়া পজিটিভ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে রাস্তার সর্বত্র।

ভোরবেলা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঝাড়ু দিয়ে মোটামুটিভাবে শুধু রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজের টুকরোগুলো পরিষ্কার করলেও পরবর্তী এক ঘণ্টার মধ্যেই রাস্তাগুলো আবার আগের রূপে ফিরে আসে।

ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের চরম নোংরা পরিবেশের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেনেজ সিস্টেম জ্যাম হয়ে রাস্তা ও গলিপথগুলোতে নোংরা পানি জমে যায়।

ছাপাখানার কালি ও বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রিত এ নোংরা পানি মাড়িয়ে বাজার-ঘাটসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনে চলাফেরা করতে গিয়ে নানাবিধ চর্মরোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।

প্রেস মালিক ও বাড়ির মালিকদের দাপটে এ বিষয়ে ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারছেন না। ফলে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপই হতে চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন, প্রেসগুলো তাদের ছাপার কাজ শেষে বর্জ্যগুলো যদি একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলত, তবে এলাকা এতটা নোংরা হতো না।

আর বৃষ্টিতে ড্রেন জ্যাম হয়ে কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিও জমত না। এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলর এ বিষয়ে জোরালো কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের এ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বক্স কালভার্ট রোড থেকে মগার গলি, ফকিরাপুল ১নং গলি, আরামবাগ হিটলার গলি, দেওয়ানবাগ গলি, ফকিরাপুল পেপসি গলিসহ প্রায় প্রতিটি গলিপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছাপাখানার উচ্ছিষ্ট কাগজ, কাগজের প্যাকেট, নাইলনের দড়ি, কালির কৌটা ইত্যাদি নানাবিধ বর্জ্য। বৃষ্টির কারণে এসব কাগজ ভিজে ধুলোর সঙ্গে মিশে রাস্তার পরিবেশকে আরও কর্দমাক্ত করে তুলেছে।

শুধু ছাপাখানার বর্জ্য নয়, পাশাপাশি কোমল পানীয়ের খালি বোতল রয়েছে এ তালিকায়। ফলে মাত্র এক বছর আগে সম্প্রসারিত ড্রেনেজ লাইনে জ্যাম হয়ে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ মুঠোফোনে বলেন, প্রেস মালিক ও বাড়ির মালিকদের বলতে বলতে আমি এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

এরা কোনো কথাই শোনেন না। সরকার ইতিমধ্যে আবাসিক এলাকা থেকে ছাপাখানা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেও তারা তা মানছেন না।

উপরন্তু আমি আবাসিক এলাকা থেকে প্রেস সরিয়ে নেয়ার জন্য তাগাদা দেয়ায় প্রেস মালিকরা আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন মিথ্যা ও বাজে কথা ছড়িয়ে এলাকায় আমার রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট করার হীনপ্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।

আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রেস মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের উচ্চমহলের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে ইতিপূর্বে এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। এলাকার কাউন্সিলরও আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি যে বলে বলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তাও আমার জানা নেই।

তবে যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি আমার কাছে এসেছে, আমি দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply