ব্যাটের পর বল হাতে দাপুটে সাকিবের অলরাউন্ড প্রদর্শনীর দিনে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের করা ২৪৬ রানের জবাবে ১৯৬ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা। এই জয়ের ফলে সিরিজে হোয়াটওয়াশ এড়ালো তামিমের দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও রানের খাতা খুলতেই না পারা লিটন এবার জস বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৩ বল খেলে ফিরলেন শূন্যতেই। ক্যারিয়ারে প্রথমবার টানা দুই ইনিংসে কোনো রান না করেই আউট হলেন এই ডানহাতি ইনফর্ম ওপেনার।
ইনিংসের ৩য় ওভার করতে আসা স্যাম কারানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম। আউট সুইং ডেলিভারিকে লেগে কাট করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় উপরে। আর, অফ সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা ইংলিশ ফিল্ডার জেমস ভিন্সের হাতে ধরা পড়েন তামিম। ৬ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার।
তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। শান্ত ও মুশফিক মিলে গড়েন ৯৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। শান্ত তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন। ম্যাচের ২৫তম ওভারে রেহান আহমেদের ডেলিভারিকে লেগ সাইডে পাঠান শান্ত। নন স্ট্রাইকে থাকা মুশফিকের সাথে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের ভুল বোঝাবুঝিতে আর শেষ রক্ষা হয়নি শান্তর। রান আউটে হয়ে থামে ৫টি চারের সাহায্যে শান্তর ৭১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
এরপর সাকিবকে নিয়ে রানের চাকা সচল রেখেই ব্যাট করতে থাকেন মুশি, তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫১তম অর্ধশতক। তবে দলীয় ১৫৩ রানে আদিল রশিদের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৭০ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস। বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি রিয়াদও, করেছেন মাত্র ৮ রান। তবে বাকি ব্যাটারদের আশা যাওয়ার মিছিলে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। এরপর আফিফ হোসেনকে সঙ্গী করে রান বাড়াতে থাকেন সাকিব। ভালো শুরুর আভাস দিয়েও ক্রিস ওকসের বলে কাভারে মঈন আলির হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন আফিফ। ১৫ রান করে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
অন্যপ্রান্তে, সাকিব তার ক্যারিয়ারের ৫২তম অর্ধশতক পূরণ করেন। ২১৯ থেকে ২২৭ এই ৮ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৫) ও তাইজুল ইসলাম (২)। ৪৬ দশমিক ৩ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু একপ্রান্তে, একা লড়াই চালিয়ে যান সাকিব। আর্চারের বলে আউট হওয়ার আগে ৭ চারের সাহায্যে ৭১ বলে ৭৫ রানের এক লড়াকু ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এই পোস্টার বয়। সাকিব বিদায় নেয়ার পরের বলেই আর্চারের বলে এলবিডব্লিউ আউট হন মোস্তাফিজ। সেই সাথে টানা ৩ ম্যাচেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন আর্চার। ২টি করে উইকেট পান কারান ও রশিদ। এছাড়াও একটি করে উইকেট নেন ওকস ও রেহান আহমেদ। ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করবে ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশের দেয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরুই করেছিলেন ফিল সল্ট ও ইনফর্ম ওপেনার জেসন রয়। কিন্তু প্রথমবারের মতো বোলিং পরিবর্তনেই যেনো ঘুরে গেলো ম্যাচের গতিপথ! সাকিব আল হাসানের দুই ওভারে দুই উইকেটের সাথে মাঝের ওভারে এবাদতের আঘাত- টানা তিন ওভারে তিন ইংলিশ ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ।
মোস্তাফিজ-তাইজুলের করা প্রথম স্পেল অনায়াসেই খেলেছেন রয় ও সল্ট। কিন্তু আক্রমণে এসেই ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপকে এলোমেলো করে দেন সাকিব আল হাসান। নবম ওভারের শেষ বলে ক্রিজে জমে যাওয়া ফিল সল্টকে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারেই এবাদত সাজঘরে ফেরান প্রথম ম্যাচে টাইগারদের পরাজয়ের প্রধান কারণ ডাভিড মালানকে। টাইমিং মিস করে মিড অনে মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে কোনো রানই করতে পারেননি মালান।
দ্বিতীয় ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয় তখনও ছিলেন ক্রিজে। পরের ওভারে আক্রমণে এসে সেই কাঁটাও উপড়ে ফেলেন সাকিব। উইকেট টু উইকেট ডেলিভারিতে তিনি ভেঙে দেন জেসন রয়ের স্ট্যাম্প। ১ রানে ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে ২৪৭ রানের লক্ষ্যকে ইংলিশদের সামনে আরও বড় করে তোলো বাংলাদেশ।
৪র্থ উইকেট জুটিতে স্যাম কারানকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে জেমস ভিন্স। ৮১ বলে ৪৯ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটার। দলীয় ১০৪ রানে মিরাজের বলে লিটনের হাতে স্যাম কারান আউট হবার আগে করেন ৪৯ বলে ২৩ রান। আর পরের ওভারে মঈন আলীকে বোল্ড করে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন এবাদত। কিন্তু ক্রিজে তখনও ছিলেন অধিনায়ক জস বাটলার। ক্রিস ওকসকে সাথে নিয়ে ৭ম উইকেটে আবারও চেষ্টা চালান তিনি। দলীয় ১৫৮ রানে বাটলারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারকে হারিয়ে ইংলিশদের জয়ের স্বপ্ন তখন শেষ। এরপর আদিল রাশিদকে তাইজুল নিজের ২য় আর সাকিব ক্যারিয়ারের ৩০০তম উইকেট হিসেবে রেহান আহমেদকে আউট করলে জয়ের পথে হাটে টাইগাররা।
শেষ দিকে ক্রিস ওকসের ৩৪ রান শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে। মোস্তাফিজের বলে ওকস কট অ্যান্ড বোল্ড হলে ৪১ বল বাকি থাকতে ১৯৬ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশদের ইনিংস।
এই জয়ের ফলে আইসিসি সুপার লিগে টেবিলের চারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। পেছনে ফেলেছে পাকিস্তান আর অস্ট্রেলিয়াকে।
এ এইচ/ইউএইচ/
Leave a reply