যমুনা টেলিভিশনে খবর দেখে গরুর হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জরিমানা

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

যমুনা টেলিভিশনে লাইভ প্রতিবেদন প্রচারের পর সরকারি নিয়ম না মেনে কোরবানির গরুর টোল আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি হাট ইজারাদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এর আগে, মঙ্গলবার বেতগাড়ি হাট থেকে যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত লাইভে দেখানো হয়, হাটের ইজারাদাররা গরু ক্রেতাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা এবং বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে টোল আদায় করছেন। অথচ হাটে টাঙ্গানো ইউএনও কার্যালয়ের নির্ধারিত টোলের তালিকায় শুধু ক্রেতার থেকে ৫০০ টাকা নেয়ার কথা লেখা আছে। কিন্তু, ইজারাদাররা তা না মেনে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা আদায় করছেন।

হাটটিতে প্রতি হাটে অন্তত ২ হাজার গরু বিক্রি হয়। আর, প্রতি হাট বারে ইজারাদাররা অবৈধভাবে ও সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অন্তত ২০ লাখ টাকা আদায় করছেন।

যমুনা টেলিভিশনে এ বিষয়ক লাইভ প্রতিবেদন দেখে ওই হাটে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্নার নির্দেশে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুলতামিজ বিল্লাহ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় হাট ইজারাদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদন দেখে আমরা সেখানে অভিযান চালাই। যেহেতু আমাদের লোকবলের সংকট, সে কারণে ওই হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছিল না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠিয়ে সেখানে অতিরিক্ত টোল নেয়ার প্রমাণ মেলে। পরে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, র্নিধারিত টোলের বাইরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের থেকে বেশি টোল নেয়ার কোনো বিধান নেই। অনিয়ম পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেবো। এরইমধ্যে, হাট এলাকায় আমরা মাইকিং করেছি এ বিষয়ে এবং ইজারাদারদেরকেও সতর্ক করে করেছি।

এদিকে, ভুক্তভোগী ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, যখন ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেন তখনও হাটে ক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টোল আদায় করছিলো প্রায় ৪৭ জন টোল আদায়কারী।

সিদ্দিক নামের এক গরু বিক্রেতার অভিযোগ, প্রশাসনের সাথে সখ্যতা থাকায় তাদের চোখের সামনেই ক্রেতা-বিক্রেতার পকেট কাটা হলেও এক্ষেত্রে প্রশাসন নির্বিকার। ২০ হাজার টাকা জরিমানাকে ‘আই ওয়াশ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার দাবি, যেখানে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত কামাচ্ছে সেখানে ইজারাদার ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদুল আলম বলেন, শুধু বেতগাড়ি হাটেই নয়, হাতেগোনা দুই একটি হাট ছাড়া রংপুরসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের ১৩৪টি উপজেলার সব হাটেই এভাবে গরু ক্রেতাদের কাছ থেকে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুন এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় চলছে। এভাবে ১৫ দিনের ব্যবধানে ইজারাদার চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের সাথে লেনদেনের সখ্যতা থাকায় বছরের পর বছর কোরবানির সময় এ চক্রটি অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে কোনো প্রতিকারও মিলছে না।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply