নুুরুজ্জামান খান:
কুইন্টন ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ক্রিজে এসেই প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চড়াও হওয়াটাই তার স্বভাবসিদ্ধ। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বোলারদের মনোবল ভেঙে দেয়াই তার ব্যাটিং টেকনিক। দারুণ প্রতিভাধর এই ব্যাটার ২৮ বছর বয়সেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। ভারতে চলমান বিশ্বকাপ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় জানাবেন ৩০ বসন্ত পার করা ডি কক। এরইমধ্যে অবসরের ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
তার শেষ বিশ্বকাপে যেন তিনি সবটাই ঢেলে দিচ্ছেন। বলা যায়, রয়েছেন ফর্মের একেবারে তুঙ্গে। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। বিদায়বেলা নিজ তুলির আঁচড়ে রাঙাচ্ছেন নিজের ক্যারিয়ার।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে ব্যাট করেছেন ডি কক। রান তুলেছেন ৫৫০। গড় ঈর্ষণীয় ৬৮ দশমিক ৭৫। ১১১ দশমিক ৩৪ স্ট্রাইট রেটে ব্যাটিং করা ডি কক ৫৫টি চার এবং ১৮টি ছক্কা মেরেছেন। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন চারটি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে খেলেন তিনি ৮৪ বলে ১০০ রানের ইনিংস।
দ্বিতীয় ম্যাচেও অজিদের বিপক্ষেও তিন অঙ্কের দেখা পান। ১০৬ বলে তিনি করেন ম্যাচজয়ী ১০৯ রান। তবে ডাচদের বিপক্ষে হাসেনি ডি ককের ব্যাট। ওই ম্যাচে তিনি ফেরেন ২২ বলে মাত্র ২০ রান করে। ম্যাচে প্রোটিয়ারাও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারে। পরের ম্যাচেও রানের দেখা পাননি ডি কক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম বলে চার মেরে শুরু করলেও দ্বিতীয় বলেই ফিরে যান সাজঘরে।
টানা দুই ম্যাচের ব্যর্থতা যেন তার ‘রানক্ষুধা’ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। তাই তো নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশকে পেয়ে রীতিমত ছেলেখেলায় মাতেন। খেলেন ১৪০ বলে ১৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। যেটি তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসও। ওই ম্যাচে তিনি ১৫টি চার এবং ৭টি ছক্কা হাঁকান। মাঝে আবার পাকিস্তান ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। ওই ম্যাচে ১৪ বলে করেন ২৪ রান। এর পরের ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে ঠিকই তুলে নেন সেঞ্চুরি। ১১৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংসটিতে মারেন ১০টি চার ও তিনটি ছক্কা। নিজেদের অষ্টম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এ ম্যাচটা রাঙাতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৫ রানেই পেসার মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে।
চলতি আসরে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন ডি কক। কুমার সাঙ্গাকারা এবং রোহিত শর্মার পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে করেছেন চারটি সেঞ্চুরি। বাকি ম্যাচগুলোতে আর একটি করতে পারলেই ছুঁয়ে ফেলবেন রোহিতের পাঁচ সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ডও। আর যদি, দুটো শতক করতে পারেন তাহলে যে সিংহাসনটা হয়ে যাবে তার একার। অথচ এই আসরে আসার আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার কোনো শতকই ছিল না। ২১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা ডি কক দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এই ফরম্যাটে তৃতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানও। তার ওপরে আছে ২৭ সেঞ্চুরি করা হাশিম আমলা এবং ২৫ সেঞ্চুরির মালিক এবি ডিভিলিয়ার্স। এছাড়া উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে সাঙ্গাকারার ৫৪১ রানের রেকর্ডটিও এ আসরেই ভেঙেছেন ডি কক।
তার ফর্মের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে শচীন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ডও। ২০০৩ আসরে এই ক্রিকেট লিজেন্ড ১১ ম্যাচে করেছিলেন ৬৭৩ রান। যেটি এক আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ডি কক ৮ ম্যাচে করেছেন ৫৫০ রান। এখনো কমপক্ষে দুই ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাবেন তিনি। আর দল ফাইনালে গেলে তিন ম্যাচ সুযোগ পাচ্ছেন। তার ব্যাট যেভাবে হাসছে কে জানে, গ্রেট শচীনের রেকর্ডটি হয়তো চলে যেতে পারে ডি ককের দখলে।
প্রবাদ আছে- ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ হয়তো এ কারণেই নিজের শেষটা রাঙিয়ে যাচ্ছেন এই প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
অন্যদিকে, মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে অভিষেক হয়েছিল কিউই তরুণ রাচিন রবীন্দ্র’র। বাংলাদেশের বিপক্ষে হারা সেই সিরিজে ভালো পারফর্ম করতে পারেননি রবীন্দ্র। মাঝে কিছুদিন অনিয়মিতও ছিলেন দলে। তবে ভারতে চলমান বিশ্বকাপ আসরে ঠিকই আলো ছড়াচ্ছেন এই তারকা। মাত্র ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ নিজের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে ব্যাট করেছেন। এতে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে তিন সেঞ্চুরি ও দুই অর্ধশতকে তুলেছেন ৫২৩ রান। তিনি এই আসরের এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৪৯টি চার ও ১৬ ছক্কাও মেরেছেন তিনি। পাশাপাশি শিকার করেছেন তিন উইকেট।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নেন রবীন্দ্র।দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেন ৫১ রান। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি রান পাননি। ওই ম্যাচে করেন মাত্র ৯ রান। চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ৩২ রান। ভারতের বিপক্ষেও অর্ধশতকের দেখা পান এই কিউই টপঅর্ডার ব্যাটার। খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়ার রান পাহাড়ের ম্যাচেও সেঞ্চুরির দেখা পান রবীন্দ্র। তার ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংসে ভর করে অজিদের দেয়া ৩৮৯ রান তাড়ায় কিউইরা হেরেছিলো মাত্র ৫ রানে। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে মাত্র ৯ রান করলেও পরের ম্যাচে আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন এই তরুণ ব্যাটার। যদিও তার ৯৪ বলে ১০৮ রানের ইনিংসের পরও ফখর জামানের ঝড়ো ইনিংসের পর বৃষ্টি আইনে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।
আট ম্যাচ ব্যাট করেই তিনি নিজের দখলে নিয়েছেন বেশ কয়েকটি রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে তিনটি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন রাচিন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সি (২৫ বছরের নিচে) হিসেবে কমপক্ষে তিন সেঞ্চুরির রেকর্ডটি নিয়েছেন নিজের দখলে।
গ্রুপ পর্বে এখনও একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন তিনি। দল সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যেতে পারলে সুযোগ পাবেন আরও দুই ম্যাচে রান করার। বাকি ম্যাচগুলোতে আরও কতো রান করে এই তরুণ নিজের প্রথম বিশ্বকাপ রাঙাবেন, সেটিই দেখার বিষয়।
/এনকে
Leave a reply