আল মাহফুজ:
হাই ভোল্টেজ ম্যাচ আর ‘হাই ভোল্টেজ’এর মোড়কে ধরা দিলো না। মনে হলো, দু’দলের মাঝে শক্তির ফারাক বিশাল। বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে ‘শক্তিশালী’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৩ রানে হারিয়েছে ‘স্বাগতিক’ ভারত।
রোববার (৫ নভেম্বর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভিরাট কোহলির রেকর্ড সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান তোলে ভারত। জবাবে প্রোটিয়ারা অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৮৩ রানে। বিশাল ব্যবধানে জয় পায় ভারত।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন রোহিত শর্মা। রোহিত ঝড়ে প্রথম ১০ ওভারেই ভারত সংগ্রহ করে ৯১ রান। ২৪ বলে ৬ চার ও দুই ছয়ে ৪০ রান করেন ভারত অধিনায়ক। কিছুক্ষণ পর আরেক ওপেনার শুভমান গিল সাজঘরে ফেরেন ২৪ বলে ২৩ রান করে। এরপর কোহলি ও আয়ারের জুটিতে আসে ১৫৮ বলে ১৩৪ রান।
শ্রেয়াস আয়ার প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৮৭ বলে ৭৭ রান করে। তবে অপরপাশে দাঁতে দাঁত কামড়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন অভিজ্ঞ ভিরাট কোহলি। সেঞ্চুরি না করে আজ ফিরবেন না– এমন পণ করেই হয়তো আজ ব্যাট হাতে নেমেছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। অবশেষে নিজের ৩৫তম জন্মদিনে তুলে নেন শতক। এ সেঞ্চুরি দিয়ে ওডিআইতে টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ৪৯ শতকের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন এই তারকা। শেষ দিকে সুরিয়াকুমার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার ক্যামিও ইনিংসের ওপর ভর করে ভারত রানের পাহাড় গড়ে।
৩২৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। রবীন্দ্র জাদেজার স্পিন বিষে একশ’র আগেই তারা গুটিয়ে যায়। জাদেজা তুলে নেন ফাইফার (৫ উইকেট)। অপর স্পিনার কুলদীপ যাদপের শিকার ২টি উইকেট। ভারতীয় পেসারদের বল মোকাবেলা করারও কোনো অস্ত্র প্রোটিয়াদের ভাণ্ডারে ছিল না।
এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্বলতা একটাই। আর তা হলো– রান তাড়া করা। আগে ব্যাট করে তিনশ’র ওপর রান সংগ্রহ করাটা যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবারের আসরে (৫ ম্যাচে আগে ব্যাট করে সাড়ে তিনশ’র ওপরে রান তুলেছে চারবার)। কিন্তু পরে ব্যাট করতে গেলেই প্রোটিয়াদের জানে পানি থাকছে না। দুবারই হারতে হয়েছে। রান তাড়া করতে নেমে হার মেনেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডাচদের সাথেও। পাকিস্তানের বিপক্ষেও পরে ব্যাট করে হারতে বসেছিল। সেখান থেকে শেষ উইকেটের জুটিতে তাদের উদ্ধার করে দুই ‘এশিয়ান ব্লাড’ কেশভ মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি।
বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু প্রতিবারই তারা ফাইনালের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে। কখনও বৃষ্টি আইন, কখনও চাপে ভেঙ্গে পড়ার প্রবণতার কারণে তারা খালি হাতে বাড়ি ফেরে। একারণে নিন্দুকেরা তাদেরকে ‘চোকার্স’ বলে ডাকে।
এবারও বরাবরের মতো অন্যতম পরাক্রমশালী দল হিসেবে নিজেদের জাহির করছে ডি ককরা। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার নিয়মিতভাবে রান পাচ্ছে। আগে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবেই সেমি নিশ্চিত করেছে তারা। কিন্তু পরে ব্যাট করার জুজু কিংবা চাপে ভেঙ্গে পড়ার প্রবণতা না কাটাতে পারলে এবারও হয়তো খালি হাতে দেশে ফিরতে হবে তাদের।
২২ গজের মঞ্চে জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছেন দলের সেরা তারকা কুইন্টন ডি কক। চারটি শতকসহ ৮ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৫০ রান করেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে না পারলে এই রান উৎসব একেবারে মূল্যহীন হয়ে থাকবে ডি ককের কাছে। মূল্যহীন হয়ে থাকবে হয়তো পুরো দলের কাছে। রাউন্ড রবিন লিগের দুর্বলতা কাটিয়ে নকআউট পর্বে ভিন্নরূপে দেখা যাবে প্রোটিয়াকে? নাকি আফ্রিকার ভাগ্যে এবারও অধরা থেকে যাবে বিশ্বসেরার ট্রফিটি? এবার নিশ্চয়ই তারা হাঁটতে চাইবে না বিনয় মজুমদারের কবিতার সাথে–
“সময়ের সাথে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি
ব্যর্থ আকাঙ্খায়, স্বপ্নে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে যেখানে
একদিন জল জমে, আকাশ বিস্বিত হয়ে আসে..”
Leave a reply