বিশ্বকাপ ফাইনালের মহারণে প্রস্তুত ভারত-অস্ট্রেলিয়া

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপ ফাইনালের মহারণ কাল। ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আহমেদাবাদে মুখোমুখি হবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও টুর্নামেন্টের অপ্রতিরোধ্য দল ভারত। চলতি আসরে রোহিত শর্মার দল টানা ১০ জয় পেলেও, অজিরাও পেয়েছ টানা ৮ জয়। তাইতো জমজমাট মাঠের লড়াই দেখার প্রত‍্যাশা দুই দলের তরফ থেকেই।

আগামীকাল রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি। দুর্দান্ত ফর্ম, সেইসাথে ঘরের সমর্থক। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের এই গ‍্যালারী গুলো ভরে যাবে নীল জার্সি পরা ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকে। যার সবাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করবে ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া বলে। তাইতো অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফেভারিটের তকমাটা পাচ্ছে ভারতই।

বিশ্বকাপের এক আসরে ইতিমধ‍্যেই রেকর্ড রান করে ফেলেছেন ভিরাট কোহলি। টানা দুই ম‍্যাচে সেঞ্চুরি করে দারুণ ছন্দে আছেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে ভারতের জয়ের নায়ক হতে পারেন রোহিত শর্মা। কারণ প্রতি ম‍্যাচেই অধিনায়ক দারুণ আক্রমণাত্মক শুরু এনে দিচ্ছেন ভারতকে। পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে সফল দলগুলোর মধ‍্যে একটি ভারত। তাইতো রোহিতের আক্রমণাত্মক ব‍্যাটিং দলটির বড় ভরসার জায়গা।

ঠিক একই ভাবে বোলিংয়ে ভারতের ত্রাতা হতে পারেন মোহাম্মদ শামি। বিশেষ করে অজি দুই বাঁহাতি ওপেনারের কাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন এই সুইং স্পেশালিস্ট। বিশ্বকাপে বাহাতি ব‍্যাটারের বিপক্ষে ৫২ বল করে ৩২ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার।

বিশ্বকাপজুড়ে দাপুটে ক্রিকেটের তুলনা টানলে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বড় ব্যবধানেই এগিয়ে ভারত। আহমেদাবাদে ফাইনাল নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিত শর্মা বলেন, তারা (অস্ট্রেলিয়া) পূর্ণ দল। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেব ঐক্যবদ্ধ থাকা যেটা আমি সব সময় বলে এসেছি। প্রতিপক্ষ নিয়ে আমরা ভাবছি সঙ্গে আমরা নিজেদের ক্রিকেট নিয়ে বেশি মনোযোগী। নিজেদের দল, নিজেদের খেলোয়াড়ের জন্য কোনটা করা ভালো হবে সেদিকেই আমাদের মনোযোগ। আমরা সেখানেই স্থির থাকতে চাই।

২০১১ সালেই সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। এরপর বিশ্বকাপ তো বটেই, ২০১৩ সালের পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টও জিততে পারেনি দলটি। রোহিত শর্মা তাই এবারের ফাইনালের গুরুত্বটা ভালোই টের পাচ্ছেন। রোহিত বলেন, আমি গুরুত্বটা জানি। তাই শান্ত ও ফুরফুরে মেজাজে আছি। ২০১১ সালে কী ঘটেছিল কিংবা আগামীকাল কী হবে তা ভেবে আবেগপ্রবণ হতে চাই না। এই বিশ্বকাপ শুরুর সময় (দলের ভেতর) যে পরিবেশ তৈরি করেছিলাম (ফাইনালে) সেটারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই। সবাই ভালো ফর্মে আছে। এটা ধরে রাখতে চাই। যেটা বলে এসেছি, নিজেদের বড় কিছু মনে করতে চাই না, আবারও ছোটও ভাবতে চাই না। ভারসাম্যটা ধরে রেখে কাজটা ঠিকঠাকমতো করতে চাই।

অন্যদিকে, প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে অজিরা। টানা সাত জয়ে এরপর জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। শেষ চারের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রোটিয়াদের ৩ উইকেটে হারিয়ে রেকর্ড ৮ম বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয় মাইটি অস্ট্রেলিয়া।

ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, আমরা জানি, গ্যালারি একদম ঠাসা থাকবে। ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক ভারতকেই সমর্থন করবেন। ব্যাপারটা দারুণ। তারা এই টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলছে, এখনও অপরাজিত। তবে আমরা জানি, নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আমরা ওদেরকে ভালোই নাড়িয়ে দিতে পারব। গত কয়েক বছরে ওদের সঙ্গে আমরা নিয়মিতই খেলেছি এবং সাফল্য পেয়েছি। সব মিলিয়েই দারুণ একটি ফাইনালের আবহ গড়ে উঠছে।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন ষষ্ঠ ট্রফি জিততে চাইলে পাওয়ারপ্লেতে ভালো করতে হবে অষ্ট্রেলিয়াকেও। শামি ও বুমরাহর বিপক্ষে সাফল‍্য পেলে বড় স্কোর করার পথটা সুগম হবে অনেকটাই। সে ক্ষেত্রে ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেডের ভালো শুরু পাওয়াটা খুব জরুরি। শুরুতে ভালো ভিত পেলে মিচেল মার্শ, স্টয়নিস, ম‍্যাক্সওয়েলরা বড় স্কোর এনে দিতে পারবে ক‍্যাঙ্গারুদের। সেই সাথে বল হাতে স্টার্ক ও হ‍্যাজেলউডকে শুরুতেই ফেরাতে হবে রোহিত শর্মা ও ভিরাটদের।

ফাইনাল ম্যাচে নতুন বলের দুই পেসারের ওপর নির্ভরতার কথা জানালেন কামিন্স। অজি অধিনায়ক বলেন, জশ হেইজেলউডের সঙ্গে (বোলিংয়ে) তার উদ্বোধনী জুটিটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কোনো ম্যাচে তাদের প্রভাব কতটা হতে পারে, সেটি আমরা ওই রাতের বোলিংয়ে দেখতে পেয়েছি। তারা বড় ম্যাচের ক্রিকেটার। আইসিসি টুর্নামেন্টে কয়েকটি ফাইনাল খেলেছে। এর গুরুত্ব আপনি জানেন।

দুই দশক পর ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-অস্ট্রেলিয়া। যেখানে হেক্সা মিশনে প্যাট কামিন্সের দল। আর ২০০৩ এর প্রতিশোধ নিতে মাঠে নামবে মেন ইন ব্লুরা। জানিয়ে রাখা ভালো, ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের জন্য আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ফ্লাইট পঞ্চাশটিরও বেশি। ফাইনালের জন্য সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে একশটিতে! তাই বলাই যায়, ক্রিকেট বিশ্ব নয় গোটা বিশ্বেরই চোখ থাকবে আহমেদাবাদে।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply